আজ শুক্রবার । পায়েলের আজ ছুটি । সে রাজধানীর সাধনা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষিকা । ৩৫ বছর বয়সী মিস পায়েল নাহার ইস্কাটনের বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে । পায়েলের পায়েলের বড়বোন দোয়েল নাহার বিয়ের পর দোয়েল শিকদারে রূপান্তরিত হয়েছে । এখন সে দু’ মেয়ের মা ।
বহুদিন পর আজ নিজবাড়িতে আগমন ঘটল দোয়েলের ।
পায়েল— কিরে আপা! এত মনমরা হয়ে আছিস কেনরে?
দোয়েল— কই? নাতো!
পায়েল— রাশেদের বদঅভ্যাসটা বুঝি এখনও গেলনা!
দোয়েল— রাশেদ কিরে! দুলাভাই বলতে পারিসনা?
পায়েল— এত ভাল হোসনেরে আপা! আর কত অত্যাচার সহ্য করে যাবি? এবার প্রতিবাদ কর!
দোয়েল— দেখরে বোন! আমরা মেয়ে । আমাদেরকে সব জায়গায় মানিয়ে চলতে হয় । চাইলেও
প্রতিবাদ করা যায়না ।
পায়েল— মেয়ে বলেই সব মেনে নিতে হবে, তোকে একথা কে বলেছেরে আপা? তুই হয়ত বয়েলিং
ফ্রগ সিন্ড্রোমে ভুগছিস ।
দোয়েল— বয়েলিং ফ্রগ সিন্ড্রোম! এটি আবার কিরে? আগেতো কখনও শুনিনি!
পায়েল— আপা, শোন তবে! ব্যাঙের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে । প্রাণীটি পরিবেশের তাপমাত্রার
সঙ্গে নিজের দেহের তাপমাত্রাকে অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারে । একটি ব্যাঙকে যখন
ফুটন্ত পানির পাত্রে ছেড়ে দেয়া হয়, তখন সে লাফ দিতে না পারলেও তা না করে পানির উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেবার জন্য নিজের দেহের তাপমাত্রাকে বাড়াতে থাকে । একসময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে, ব্যাঙটি আর অ্যাডজাস্ট করতেন পারেনা । গরম পানি থেকে লাফ দেবার শক্তিটুকুও সে হারিয়ে ফেলে । এভাবেই সে মারা যায় । দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের সমাজে মেয়েরা বিশেষত বিবাহিত মেয়েরা এ ধরণের ভুল করে থাকে। মুখ বুঁজে অত্যাচার সহ্য না করে প্রতিবাদ করতে হবে ।
দোয়েল— বেশ চমৎকার জিনিস শেখালিতো! কিন্তু আমার কি আর মুক্তি হবে?
পায়েল— শোন আপা! সমাজ অনেক কথাই বলবে । মেয়েদেরকে সাহস করে নির্যাতনকারীদের
বিরূদ্ধে লড়াই করতে হবে । আমি তোর সঙ্গে আছিরে আপা ।
দোয়েল— তোর কথা শুনে খুব শান্তি লাগছেরে! আচ্ছা! এতটা কথা বলতো? তুই এত কনফিডেন্ট
হলি কিকরে?
পায়েল— চারপাশে বধূ নির্যাতন দেখে সতর্ক হয়েছি । তাছাড়া, আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিস
হাজেরা আকতার আপাকে দেখে আমার মাঝে একা পথ চলার প্রত্যয় জন্মেছে । তুইতো
জানিস, তিনি আমাদের স্কুলের হেডমিস্ট্রেস ছিলেন ।তখন থেকেই তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব
আমাকে চুম্বকের মত টানতো ।
দোয়েল— স্যালুটরে বোন! জীবনভর মাথাটা এভাবেই উঁচু করে চলিস ।
পরিচিতিঃ
রায়হান আজিজ ১৯৯২ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর পুরনো ঢাকার একটি সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । বাবা ব্যবসায়ী মোঃ ইউসুফ হোসেন ও মা গৃহিনী কামরুন নাহারের তিন সন্তানের মাঝে লেখকই সবার বড় । তিনি রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে ফার্মেসীতে সম্মানসহ স্নাতক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন । পরবর্তীকালে তিনি রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে একজন ফার্মাসিস্ট হিসেবে যোগদান করেন এবং বছর দেড়েক সেখানে কর্মরত ছিলেন ।
বর্তমানে তিনি বাবার সঙ্গে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করছেন । ছেলেবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি তার একটি ঝোঁক ছিল যে অভ্যাসটি গড়ে দিয়েছিলেন তার ছোটফুপু মিস কারিমা বেগম । লেখক ২০০৩ সালে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আয়োজিত স্কুলভিত্তিক বইপড়া কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে “স্বাগত পুরস্কার” লাভ করেন । ২০১৭ সালে দৈনিক জনকণ্ঠে জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষ্যে লেখক রচিত একটি কলাম প্রকাশিত হয় এবং সে বছরই দৈনিক সমকালের ক্রোড়পত্র “চারমাত্রা”য় তার লেখা একটি গল্প ছাপা হয় । সম্প্রতি ঢাকার “জলতরঙ্গ পাবলিকেশন্স” থেকে লেখক রচিত একটি যৌথ গল্পগ্রন্থ “জলছোঁয়া”(২০২০) প্রকাশিত হয়েছে । নাট্যপ্রেমী এ লেখক আমৃত্যু নিজেকে লেখালেখি ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রাখতে চান ।