–
–
বিহারের গয়ার কোথিলাওয়ার লাথুয়া অঞ্চলটা প্রায় পুরোটাই জঙ্গল আর পাহাড়ে ঢাকা। এই এলাকার মাটি অত্যন্ত রুক্ষ-শুষ্ক। এখানকার বাসিন্দাদের জীবিকা মূলত চাষবাস আর পশুপালন। অথচ জলের বন্দোবস্ত না থাকায় এখানকার লোকেরা চাষের কাজে খুবই সমস্যায় পড়ছিলেন।
তাই সেই জলের সমস্যা সমাধান করতে একাই এগিয়ে আসেন ওই গ্রামেরই লৌঙ্গি ভুইঞাঁ।
তিনি নিজেও কৃষিকাজ করতেন৷ কিন্তু জলের অভাবে ফলন ঠিকঠাক হত না। তাই কৃষিকাজ ছেড়ে তাঁর নিজের ছেলে-সহ গ্রামের আরও অনেকেই শহরে চলে যায় উপার্জনের জন্য। কিন্তু তিনি বুঝেছিলেন একমাত্র জলই পারে এই উদ্বাস্তু হওয়া আটকাতে।
তাই একটানা ৩০ বছরের অক্লান্ত চেষ্টায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল কেটেন তিনি। আর এই খালের জন্যই গ্রামের এত বছরের জলের সংকট এখন অনেকটাই মিটেছে।
বছর সত্তরের এই বৃদ্ধ নিজের কাজ নিয়ে তেমন কিছু বলতে চান না। খাল কাটা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে লৌঙ্গি বলেন, ’এটা করতে ৩০ বছর লেগে গেল। গ্রামের পাশের জঙ্গলে গবাদি পশু চরাতে যেতাম। তার ফাঁকে ফাঁকে খাল কাটার কাজ করতাম। একা একাই। এই কাজে আমাকে কেউ সাহায্য করেননি। করবে কী করে? যারা করতে পারে, তারা তো সব কাজের খোঁজে গ্রামের বাইরে চলে গেছে। তাই আমি একাই করতাম।‘
সাহায্য করা তো দূরের কথা, তাঁর এই কাজে বাধাও গিয়েছিলেন পরিবারের লোকজনেরা। কারণ, সেখান থেকে কোনও উপার্জন ছিল না। তবুও তিনি দমে যাননি। সবার বিরুদ্ধে গিয়ে একাই খননের কাজ চালিয়ে গেছেন। তখন গ্রামের অনেকেই তাঁর কাণ্ড দেখে তাঁকে পাগলও বলতেন।
এই অঞ্চলে বর্ষাকালে পাহাড়ের ঢাল দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। সেই পাহাড়ের ঢালেই খাল কাটা শুরু করেন লৌঙ্গি। বৃষ্টির জল সেই খালের মধ্যে দিয়ে গ্রামের একটি পুকুরে গিয়ে জমা হয়।
এই জলের জন্য সেচের কাজে যেমন সুবিধা হয়েছে, শস্যে ভরে উঠেছে চারিদিক, তেমনই গবাদি পশুগুলোও পর্যাপ্ত জল খেতে পাচ্ছে।
শুধু তাঁর গ্রামই নয়, এই জলের জন্য তিন-তিনটি গ্রামের প্রায় ৩০০০ হাজার লোকের মুখে এখন হাসি ফুটেছে। আর এই হাসি ফুটিয়েছেন— লৌঙ্গি ভু্ঁইয়া।