–
–
সুমনা আর বাসবের সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় নি অবিনাশের . কেন জানিনা প্রায়ই মনে পড়ে ওদের কথা. কেউ কারও খোঁজ রাখে নি বহু বছর. তবুও ভাঙা মন আর সেই ডুবে যাওয়া সাদা কাগজের নৌকোটা মাঝে মাঝে নোঙ্গর করে বিকেলের বারান্দায়, না ঘুম আসা রাতের গভীরে. কেন এমন হয় বুঝতে পারে না অবিনাশ.
একবার কিশোর বেলায় মামার বাড়ীর নন্দী পুকুরের ঘাটে হোলির রং খেলে চান করতে গিয়ে ছিল ওরা. সঙ্গে সমবয়সী বন্ধু রাও ছিল. হঠাৎ অবিনাশ লক্ষ করে ছিল সুমনা আর বাসব পাশের ঘাটে গিয়ে শান্ত স্থির জলে একটা সাদা কাগজের নৌকো ভাসাচ্ছে.
অবিনাশ ওদের বলেছিলো , জলে ঢেউ না থাকলে নৌকো চলে না, বেশিক্ষণ ভেসেও থাকে না. ডুবে যায়.
অবিনাশ স্থির হয়ে থাকা জলটা একটু নাড়িয়ে দিতেই ওদের নৌকোটা ভাসতে শুরু করেছিল . ওরা আনন্দে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ছিল অনেক ক্ষণ. বাসবের গালের লাল রং লেগে গিয়ে ছিল সুমনার সিঁথিতে. অবিনাশের তখন মনে পড়ে ছিল রাঙা মাসীর বিয়ের সিঁদুর দানের মুহূর্তটি.
সুমনা আর বাসবের কোনো কিছু ভাবার বয়স তখন ছিল না. ওরা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ ছিল মাত্র.
এর পর অবিনাশের মামার বাড়ীর পাট উঠে যায়. দাদু মারা যাওয়ার পর সব কিছু বদলে যায় . মামার বাড়িতে তালা পড়ে.
অবিনাশ চলে আসে টাটানগরে – নিজেদের বাড়িতে. তারপর পড়াশোনা শেষ করে লম্বা দৌড়ের ঘোড়ার মতো তার কর্ম জীবন কাটে কয়েকটি প্রাইভেট কোম্পানিতে. আজ এখানে তো কাল সেখানে. তাই অবিনাশের ঘরও হয় নি, সংসারও হয় নি.
আজ অবিনাশ অবসর প্রাপ্ত. বেলা শেষে, জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া এক অৰ্ধদগ্ধ সৈনিক মাত্র. সাফল্যর থেকে অসাফল্যের পাল্লাটাই তার বেশী ভারী. তবুও আর পাঁচটা ভুলে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনার কোন মিল খুঁজে পায় না অবিনাশ. কেন যে সময়ে অসময়ে সুমনা আর বাসবের কথা মনে পড়ে –নিজেও বোঝে না.
সুমনা আর বাসবের সম্পর্কটা কোথায় গিয়ে শেষে পৌঁছে ছিল তাও অবিনাশের জানা নেই. তবুও ওদের কথা আজও ভুলতে পারে না.
অবিনাশ কী বাসবের মধ্যে নিজের ছবিটাই দেখতে পায়? যাকে বলে প্রতিবিম্ব !মনের সঙ্গে নিয়ত যুদ্ধ করে পাঁচ জনের মতো সেও আজ ক্লান্ত. অথচ লাভ ক্ষতির কোন অংকই এর সঙ্গে জড়িয়ে নেই. কেননা সে আজও নিঃসঙ্গ, একা.
সেদিনের সেই সাদা কাগজের নৌকোটা -ই তার স্বপ্নে এখনও মাঝে মাঝে ভেসে আসে. বেহালার করুণ সুরের মতো একটা মূর্ছনা তৈরী করে. স্বপ্নের মধ্যে কে যেন বলে, আমি ডুবে যাচ্ছি আমার হাত দুটো ধরো. সেই ডুবে যাওয়া হাত দুটো ধরতে গেলেই অবিনাশের ঘুম ভেঙে যায়.
দু চোখ ঝাপসা হয়ে আসে——-
তাহলে কী ডুবে যাওয়া ঐ সাদা কাগজের নৌকোটাই অবিনাশের জীবনের সব থেকে দামী?
–না কী ব্যর্থতার দহন পর্ব?
–