–
–
সাগর আছে কিন্তু তার কোনও তীর নেই। এ রকমই একটি অদ্ভুত সাগর আছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে। নাম— সারগ্যাসো সাগর। সাগরটি দৈর্ঘ্যে ৩২০০ কিলোমিটার এবং প্রস্থে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার। সারগ্যাসো সাগরই পৃথিবীর একমাত্র সমুদ্র, যার কোনও তীর নেই।
তীরের বদলে সারগ্যাসো সাগরটিকে ঘিরে আছে আটলান্টিক মহাসাগরের চার ধরনের স্রোত। পশ্চিমে আছে গালফ স্ট্রিম, উত্তরে আটলান্টিক কারেন্ট, পূর্বে ক্যানারি কারেন্ট আর দক্ষিণে নর্থ-ইকুয়েটোরিয়াল কারেন্ট।
এই চারটি স্রোত সারগ্যাসোকে চক্রাকারে ঘুরে চলেছে অবিরাম। কিন্তু চারটি স্রোতের মধ্যে থাকা এই সাগরের জল একদম স্থির। তাই উত্তাল আটলান্টিক মহাসাগরের সব চেয়ে শান্ত জায়গা এই সারগ্যাসো সাগর।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১০৯০ খ্রিস্টাব্দে আলমোরাভিদ সাম্রাজ্যের সুলতান আলি ইবন ইউসুফ একটি জাহাজ পাঠিয়ে ছিলেন এই এলাকায়। জাহাজে ছিলেন বিখ্যাত মানচিত্র-নির্মাতা মুহাম্মদ আল-ইদ্রিসি। তিনিই এই সাগরটির মানচিত্র নির্মাণ করেছিলেন।
যেহেতু সারগাসম নামের এক ধরনের সামুদ্রিক শৈবাল এখানকার গোটা এলাকাটিকে ভরিয়ে রেখেছে, তাই পর্তুগিজরা এই সাগরটির নাম দিয়েছিল— সারগ্যাসো।
এই সারগাসম শৈবালের স্তর এখানে এতটাই পুরু যে, জাহাজ পর্যন্ত চলাচল করতে পারে না। যেতে গেলে জাহাজের প্রপেলারে শ্যাওলা জড়িয়ে প্রপেলার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে একই জায়গায় আটকে পড়ে জাহাজ। ছোট বোট হলে ডুবে যায়।
কিন্তু সমুদ্রের বুকে এত শৈবাল এল কোথা থেকে! আসলে সারগ্যাসো সাগরটিকে চার দিক থেকে ঘিরে রাখা জলের স্রোতই বয়ে নিয়ে আসে এই শৈবাল। সেগুলোই জমা হয় সারগ্যাসো সাগরের বুকে। এখনও প্রতিনিয়ত জমা হচ্ছে। তাই সারগ্যাসো সাগর হয়ে উঠেছে ‘শৈবাল সাগর’। আর শৈবালের ফাঁদে পড়েই এখানকার জল হয়ে উঠেছে স্রোতহীন এবং শান্ত।
৩৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে থাকা এই সাগরের জল অস্বাভাবিক রকমের স্বচ্ছ। এতটাই স্বচ্ছ যে, জলের ২০০ ফুট নীচে কী আছে, তাও স্পষ্ট দেখা যায়। এখানকার জলের রং ঘন নীল এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে সব চেয়ে লবণাক্ত অঞ্চল এই সারগ্যাসো সাগর।
এই সাগরটাকে যেহেতু চারিদিক থেকে জলের স্রোত ঘিরে রেখেছে, তাই এই সাগরের চারদিকেই জল, কোনও তীর নেই।
–