–
–
“একলা ত’ আসিনি
যুগটাও সাথে আছে ।
তুফান থেকে সাবধান ।”
____ নারায়ন সুরবে । মারাঠি কাব্য সাহিত্যে আর পাঁচজন কবির চেয়ে একটু আলাদা । জন্ম, শৈশব, কৈশোর জর্জরিত হয়েছে অন্নচিন্তা করতে করতে। বিদ্যালয়ের লেখাপড়া মাত্র চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত । যা কিছু শিক্ষা, জীবন দর্শন সব আহোরণ করেছেন জীবন থেকে । জীবনে পাওয়া না পাওয়া
সুখ-দুঃখের স্বাদ থেকে । বেঁচে থাকার ধরন ও বৈচিত্র্য থেকে । মানুষের লোভ হিংসা ক্রোধ সাধ আহ্লাদ দুচোখ দিয়ে দেখেছেন, মন দিয়ে অনুভব ও উপলব্ধি করেছেন। দেখেছেন দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন । তাই তাঁর কবিতায় কাব্য এবং জীবন পৃথক থাকেনি । অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে সম্পৃক্ত । জীবন মিশে গেছে কবিতায়, কবিতা মিশে গেছে জীবনে ।
” এরা এবার জেগে উঠেছে
বদলে দেবে পৃথিবীর রূপটাকেই ।”
কার্ল মার্কস, লেলিন এর আদর্শে অনুপ্রাণিত তরুণ বয়স থেকে। সাধারনত: মারাঠি কবিতায় আমরা দেখতে পাই, কেবল সুন্দর মধুর কল্পনা । আর তাও পরিবেশিত হয়ে থাকে কঠিন শব্দ আর দুর্বোধ্য ছন্দ প্রকরণের মাধ্যমে । যা অল্প শিক্ষিত ও সাধারণ বোধবুদ্ধির মানুষের পক্ষে বোধগম্য নয় ।
নারায়ণ সুরবে’ সেই প্রথা ও বাধা ভেঙেছেন । তাঁর কবিতা বোঝার জন্য সংস্কৃত জানার প্রয়োজন নেই। নেই ছন্দজ্ঞান থাকার আবশ্যকতা । এই কারনে তাঁর কবিতা অন্য মাত্রা পায়, অন্য মূল্য পায় পাঠকসমাজে । তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রত্যেক কবির কাব্যকৃতি লিখনশৈলী ও রচনাকৌশল সেই যুগকে চিহ্নিত করে। তিনি বলেন, মানুষের কথাই আমি মানুষের জন্যই লিখি।
“এই বস্তিতেই একদা উদিত হবে নতুন সূর্য
আমাকে এগিয়ে যেতে হবে ততদিন
দ্বারপ্রান্ত থেকে আসবে সোনারঙের রথ
প্রিয়ে, আমার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে
ততদিন ….. “
সেই উদিত নতুন সূর্য আজও এলোনা । দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলির স্বপ্ন আজও অধরা । পরিবর্তনবাদী মানুষগুলি চিরায়ত সমাজ ব্যবস্থায় লালিত শোষিত হতে হতে ব্রাহ্মণ, সমাজপতি , ধনী ও শাসকদের প্রতি আজন্ম পালিত ভক্তি-শ্রদ্ধার কারণে একজোট হতে পারল না । সমাজে পরিবর্তন আর হলো না । উদিত হল না নতুন সূর্য ।
কখনো তাঁর কলম দুঃখবোধে জর্জরিত ——
” আগামী দিনের সমস্ত দুঃখরাশি
আমি ভুলে যাবো ভাবছি
আজকের ব্যথাটুকু কোথা রাখি
কেউ ত’ বলে দেয় না …..”
তবুও কবির দু’চোখে জীবনের আশা, নতুন ভোরের স্বপ্ন সবুজ কিশলয়ের মত কচিপাতা মেলে দেয় ——
“হাতে ধরা পতাকা উড়বে
হাঁসেরা উড়ে যাবে বাতাসের সঙ্গে
যাত্রা শুরু হবে এবার
শুরু হবে নব নব সৃষ্টির ।”
মারাঠি সাহিত্যের সমালোচকদের বিচারে কবি নারায়ন সুরবে’ নিজের স্বভাবগুণে, সৃষ্টি ও বৈচিত্রের গুনে এক সর্বজনস্বীকৃত স্বতন্ত্র জাতের কবিতা শিল্পী। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ —–
৭টি কবিতা সংকলন। প্রবন্ধ পুস্তক ৯টি । সম্পাদনা ৪টি । পুরস্কার পেয়েছেন —— রাজ্য পুরস্কার (১৯৬৩ ও ১৯৬৭), সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কার (১৯৬৮) , নরসিং মেহেতা পুরস্কার (১৯৬৯), কবীর সম্মান পুরস্কার (১৯৬৯), জনস্থান পুরস্কার (২০০৫) প্রভৃতি ।।
–
–