–
–
শীতটা এবার বেশ জমিয়ে পড়েছে ।অল্প বয়সে শীতকালটা ভালো লাগলেও রমেনবাবু এখন আর ঠান্ডা আগের মত উপভোগ করতে পারেন না । বয়সটাও তো কম হলো না – সত্তর কখন পার করে ফেলেছেন ।তার ওপর গিন্নী রমলা দেবী শীত পড়লেই বাতের ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠেন – সব মিলিয়ে নিঃসন্তান রমেনবাবু একেবারে নাজেহাল !
–
গত বছর শীতে রমলা দেবীর ভাইঝি দিল্লি থেকে তাঁদের জন্য একটা দামী কম্বল এনেছিল ।তখন জানুয়ারির শেষ – তাই গতবছর আর কম্বলটা গায়ে দেওয়া হয়নি ।এবার শীত পড়তেই রমলাদেবী বায়না ধরেছেন – কম্বলটা কাবার্ড থেকে বার করে রোদে দিতে হবে । আর ক ‘ বছরই বা বাঁচবেন – ভালো জিনিসগুলো ব্যবহার না করলে কে আর নেবে ! তাঁদের তো ছেলে মেয়েও নেই ।
–
এমনিতে তাঁরা দুটো সিঙ্গেল লেপ গায়ে দিয়ে থাকেন । কম্বল কোনদিনই রমেনবাবু পছন্দ করেন না – তাই রমলা দেবী অনেক আবদার করা সত্বেও তিনি চাকরিজীবনে একটাও কম্বল কেনেন নি ।
–
এ বছর মনে হচ্ছে স্ত্রীর জেদের কাছে তাঁকে হার মানতেই হবে ! একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রমেনবাবু কাবার্ডটা খুলেই ফেলেন । পুরোনো লেপ দুটোর দিকে তাকিয়ে তাঁর মনে হয় – তারা যেন ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান করেছে ; বলছে -‘ আমাদের প্রয়োজন তাহলে এতদিন বাদে ফুরোলো !’
পেছন থেকে নতুন কম্বলটা টেনে বার করতে গিয়ে রমেনবাবু হঠাৎ তাকের এক জায়গায় তাকিয়ে থমকে গেলেন ।সেখানে সযত্নে ভাঁজ করে রাখা আছে গোলাপী সাটিনের ঢাকা পরানো একটা লেপ ।
–
রমেনবাবু হঠাৎ ডানা মেলে পিছিয়ে গেলেন অনেকগুলো বছর । বয়সটা যেন এক লহমায় কমে গেলো অনেক ।স্মৃতির মণিকোঠায় ভীড় করে এলো তাঁর বিয়ের পরপর কয়েকটা শীতকাল – এই লেপের নীচের উষ্ণতায় দুটি তরুণ প্রাণের উষ্ণতার বিনিময় ! স্মৃতির ভারে তাঁর চোখদুটো কি একটু ভিজে এলো !
–
একটা নিশ্বাস ফেলে কম্বলের সাথে সাথে ওই লেপটাকেও বার করে ফেলেন তিনি । বিনি ঝিকে ডেকে যখন তিনি ওই লেপ – কম্বল রোদে দিতে ছাদে নিয়ে যাচ্ছেন – রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন রমলা দেবী ।বিস্মিত মুখে প্রশ্ন করেন -‘ ওটা আবার বার করে আনলে কেন ?’ মৃদু হেসে জবাব দেন রমেন বাবু -‘ বুড়ো বয়সেও একটু রঙীন জীবনের খোঁজ করতে চাই । তাই এ বছর মাঝে মাঝে এই লেপটা গায়ে দেবো । দেখি – পুরোনো জীবন কিছুটা হলেও ফেরত পাই কিনা !’
–
লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে রমলা দেবীর মুখ ।অস্ফুটে একটা ‘ ধেত ‘ বলে আবার রান্নাঘরে ঢুকে যান তিনি ।