–
–
উত্তর সৌদি আরবের নেফুদ মরুভূমিতে ১ লাখ ২০ হাজার বছর আগেকার মানুষের পায়ের ছাপ খুঁজে পাওয়া গেছে।
যেখানে পাওয়া গেছে, সেখানে উট, মহিষ বা হাতির তুলনায় বড় বড় বিলুপ্ত প্রাণীদের চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তখনকার জনগোষ্ঠীর দাপটে। তাঁরা দল বেঁধে বিশাল বিশাল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শিকার করতেন। তবে তাঁরা এক জায়গায় খুব বেশি দিন থাকতেন না।
আশা করা যাচ্ছে, এই পায়ের ছাপের খোঁজ পাওয়ার ফলে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের পূর্বপুরুষদের ছড়িয়ে পড়ার আর একটি নতুন পথের হদিশ পাওয়া যাবে।
গত দশক থেকেই গবেষকেরা বলে আসছিলেন, সৌদি আরবের আবহাওয়া আগে এ রকম ছিল না। প্রাকৃতিক জলবায়ু এই রকম রুখাসুখা হওয়ার আগে ওখানকার পুরো এলাকাটাই গাছগাছালিতে ভরা ছিল। ছিল চাষবাসের প্রকৃত অনুকূল পরিবেশ। এখন যেখানে শুধুই ধুধু মরুভূমি, সেখানে ছিল ক’হাত দূরে দূরে মিষ্টি জলের হ্রদ এবং বহমান নদী।
এই পায়ের ছাপ পাওয়ার খবর পেয়ে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল ইকোলজির গবেষক ম্যাথু স্টুয়ার্ট সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমি যখন ২০১৭ সালে মাঠপর্যায়ে গবেষণার কাজ করছিলাম, তখনই আমি আলাথার এক প্রাচীন হ্রদে ওই পায়ের ছাপের সন্ধান পাই।
তখনই বুঝতে পারি, ওই হ্রদে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীরাও আসত। অনেক খুঁজেও, ওখানে কোনও পাথরের অস্ত্র পাইনি। অর্থাৎ, তাঁরা পশু শিকার করতেন না। বরং পশুদের কাছ থেকে তাঁরা একটু দূরে দূরেই থাকতেন।
গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা যে পায়ের ছাপ পেয়েছেন, তা অপেক্ষাকৃত আধুনিক মানুষের। কারণ নিয়ানডারথলদের সঙ্গে এই পায়ের ছাপের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
শুধু মানুষের পায়ের ছাপই নয়, তার সঙ্গে ২৩৩টি জীবাশ্মও উদ্ধার করেছেন তাঁরা।
আসলে যে কোনও প্রাচীন পায়ের ছাপই জীবাশ্ম প্রমাণের একটি বড় হাতিয়ার। তার থেকেও বড় কথা, ওটা কোন যুগের বা কোন সময়ের সে সম্পর্কে পায়ের ছাপ যতটা অভ্রান্ত ভাবে তথ্য দিতে পারে, তা অন্য কোনও সূত্র দিতে পারে না।
খুঁজে বের করা শত শত পায়ের ছাপের মধ্যে থেকে মাত্র সাতটিকে হোমিনিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে চারটি পায়ের ছাপ একেবারে অন্য রকমের।
এই অন্য রকম চিহ্নিতকরণ করতে গিয়ে দেখা হয়েছে, মূলত পায়ের ছাপের গভীরতা, মানে পায়ের ছাপ যাঁর, তাঁর ওজন কতটা। দেখা হয়েছে, হাঁটার সময় এক পা থেকে অন্য পা কতটা দূরে পড়ত এবং দেখা হয়েছে পায়ের আকার এবং গঠনের পার্থক্য। আর তা থেকেই বোঝা গেছে, একজন নয়, অন্তত চার-পাঁচ জনের একটা দল ওখানে এসেছিলেন।
আগে লোকের ধারণা ছিল, আদি যুগের মানুষ বোধহয় দক্ষিণ গ্রিস এবং লেভান্ট হয়ে ইউরেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁরা পথ হিসেবে একমাত্র উপকূলকেই বেছে নিয়েছিলেন।
কিন্তু এই পায়ের ছাপ উদ্ধার করার পরে অনুমান করা হচ্ছে, ওটাই একমাত্র পথ ছিল না।
কোনও কোনও গোষ্ঠী অভ্যন্তরীণ পথ, হ্রদ এবং নদী অনুসরণ করেও ছড়িয়ে পড়েছিলেন বিভিন্ন দিকে। তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার বছর আগেকার মানুষের এই পায়ের ছাপ।
–
–