–
–
” বাবু একটা কম্বল হবে , বড্ড ঠান্ডা লাগছে !” পিছন থেকে আসা কথাগুলো কানে যেতে ঘুরে দেখল হিমেশ। সেই লোকটা। বৃদ্ধ। মাথার সব চুল সাদা। চামড়া কোচকানো। পড়নের পোষাকও মলিন। কোনও এক অজানা শক্তির জোরে শরীরটাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। হাতে লাঠি নিয়ে হিমেশের পিছনে দাঁড়িয়ে।
হিমেশ লোকটাকে চেনে। মানে দিন তিনেক আগে একবারই দেখেছে। প্রতি বছরের মতো এবারও দুঃস্থ মানুষদের কম্বল বিতরন করতে বেরিয়েছিল।সেদিনই দেখেছিল ওই পার্কের পাশে। কম্বলও দিয়েছিল। আজ আবার কেনও? মনে মনেই প্রশ্ন করল ও।
মুখে বলল ” সেদিন তোমাকে কম্বল দিলাম তো। তুমি ওই পার্কের পিছন দিকটায় বসেছিলে। তোমার পাশে একটা লাল-সাদা কুকুর ছিল। কী ঠিক বলছি তো!”
” বাবু একটা কম্বল দেবেন। খুব ঠাণ্ডা লাগছে ।” লোকটা হিমেশের কথার উত্তর না দিয়ে নিজের কথাই বলল।
” সেদিন তো কম্বল পেলে।কী করলে ?” হিমেশ অবাক হয়ে জানতে চাইল।
” সেদিনের কম্বলটা পটলকে দিয়ে দিয়েছি। ও শীতে খুব কষ্ট পাচ্ছিল। তবু চায়নি। আমিই দিয়েছি। বাবু একটা কম্বল দেবেন। খুব ঠাণ্ডা লাগছে।” সেই লোকটা উত্তর দিল।
” কে পটল। তোমার ছেলে না নাতি ?” হিমেশ জিজ্ঞেস করল।
” ছেলের মুখে ঝামা ঘষি ,আর নাতির মুখে লাথি। বেটারা খুব শয়তান। আমার সব টাকা নিয়ে আমাকেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে।” লোকটা রাগ করে বলল । তারপর শান্ত হয়ে বলল ” বাবু একটা কম্বল দেবেন। আপনার তো অনেক আছে। ভগবান আপনাকে আরও দেবেন।”
হিমেশের মনে সন্দেহ হল। ও শুনেছে এই ধরনের লোকরা ভিক্ষা করে জিনিস নেয়। তারপর বিক্রি করে টাকা কামায়।
” আগে বল পটলকে কম্বলটা দিলে কেনও! ওর কাছ থেকে চেয়ে নাও।” হিমেশ একটু বিরক্ত হয়ে বলল।
লোকটা লাঠিতে ভর দিয়ে একটু সোজা হয়ে বলল ” পটল আমার অনেক উপকার করেছে বাবু।ছেলে- নাতি যখন বের করে দিল, ওই আমাকে দেখে রেখেছে।”
” পটল কে !” হিমেশ প্রশ্ন করল ।
সেই লোকটা হেসে বলল ” আমার পাশে শুয়ে থাকা সেই লাল-সাদা কুকুরটা ।”
–