–
–
আজ রোববার। বাজারের থলি হাতে বেরুনোর দিন। গিন্নির লিস্ট তৈরি। ইচ্ছে করছিল না যেতে। শাক-সবজি, আলু-পেঁয়াজের যা দাম! মাছ-মাংসই বা কম কি! যাইহোক, বাজার যতই অগ্নিমূল্য হোক, আমাদের তো খেয়ে পরে বাঁচতে হবে। আর বাঁচতে হলে বাজারে যেতেও হবে। আজ আবার মাংস-দিবস। অনেকদিন পাঁঠার মাংস খাওয়া হয় না। এতকাল আমাদের বাড়িতে রবিবারের ইজ্জত বাঁচিয়ে রেখেছে ব্রয়লার। যখনই বাজারে যাই, বিনোদের পাঁঠার দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনতিলম্বা লাইনটার দিকে অবধারিত ভাবে চোখ চলে যাবেই। চোখের কোন দিয়ে একঝলক দেখে নেওয়া। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস। সোজাসুজি তাকানোর জো নেই। চোখাচোখি হলেই বিনোদ তার স্বভাবসিদ্ধ মুচকি হাসি দিয়ে যদি ইশারায় ডাকে! বিনোদের ওই হাসিখানা যেমন অর্থপূর্ণ তেমনি তির্যক। আমার ভাল্লাগে না। আমার অসহ্য লাগে।
আ্জ কী হলো কে জানে, গুটি গুটি পায়ে এসে লাইনের পেছনে দাঁড়িয়ে গেলাম। আজ বাড়িতে পাঁঠার মাংসই হবে। লাইনে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই বাড়িতে ফোন লাগালাম- “এ্যাই শোনো, আজ কিন্তু পাঁঠার মাংস নিচ্ছি…শো-কেস থেকে প্রেসার কুকারটা নামিয়ে রেখো…বাবটু কোথায়? ওকেও বোলো যে, বাবা পাঁঠার মাংস আনছে, খুব খুশি হবে…” একনিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থেমে একটু দম নিলাম। ওপার থেকে আমার ঘোর-সংসারী গিন্নি প্রতিবাদী গলায় কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই ফোন কেটে দিয়েছি। আজ কোনো কথা শুনতে আমি রাজি নই।
“কই দাদা, এবার এগোন…” লাইনে আমার পেছনের জন তাড়া দিল। এগোলাম। আর দুজনের পরেই আমার পালা। কয়েকটা কুকুর পায়ের কাছে মাংসের ছাঁটের লোভে ঘুরঘুর করছে। মাঝেমাঝে ঝগড়া-মারামারিও করছে।
ইয়াব্বড় চওড়া একটা ছুরি নিয়ে মাংস কাটতে কাটতে বিনোদ আমাকে একবার দেখে নিল। আমিও বিনোদের দিকে সদর্পে তাকিয়ে রইলাম। আজ বিনোদের দৃষ্টিটা বড় নির্মল মনে হল।
বিনোদ আমার জন্যে এককিলো মাংস যথারীতি প্যাক করে দিল। দাম চুকিয়ে মাংস ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে কুকুরদের হট্টগোলকে পাশ কাটিয়ে বড় রাস্তায় পড়লাম। ঠিক সেইসময় একটা ভিখিরি সটান আমার সামনে এসে হাত পেতে দাঁড়াল। সারা গা-ভর্তি যেমন নোংরা, তেমনি পরণের পোশাকটাও শতচ্ছিন্ন।
যাক। আমার মুড আজ বেশ ভালোই। তার ওপর আজ বাড়িতে পাঁঠার মাংস রান্না হবে। কোনোকিছু না ভেবেই আমি পার্স খুলে একটা পাঁচশো টাকার নোট ভিখিরিটার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। ভিখিরি খুব অবাক হয়ে টাকাটা নিল। তারপর দলা পাকিয়ে মুঠোর মধ্যে ধরে রইল। আমার মনে হলো, মুঠোটা যেন আস্তে আস্তে ঘুষি হয়ে যাচ্ছে, আমার শরীরে আছড়ে পড়বে বলে।