–
—
এই বিজয়ের নেপথ্যে
আমি কোন্ হৃদয়ের কোন্ ক্ষত নিয়ে বলবো?
ছিন্নভিন্ন কোন্ রক্তাক্ত শরীর,
কোন্ রক্ত যমুনার কথা লিখবো আমি!
একটি স্বাধীন দেশ, একটি মানচিত্র,
একটি পতাকার ইতিহাসে
কতোগুলো মানুষের জ্বলন্ত আর্তনাদ লিপিবদ্ধ হলে
নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর মুক্ত ভূমি পায় মানুষ।
আমি কোন্ ভগ্ন হৃদয়ের স্বপ্ন ভঙ্গের কথা শোনাবো
কিশোরী মেয়েটি স্বপ্নে বিভোর ছিলো যে ছেলেটির
তার বুকও ঝাঁঝরা হলো নিরবে।
কার জানা আছে এই হৃদয়ের অনুভূতি,
কোন সে রক্তজবা গোলাপ!
মেহেদীর রং শুকোলো না মায়াবি দু’হাতের
ওরা হিংস্র হাতে কেড়ে নিলো যুবকের মেহেরজান।
কোন্ নিস্তব্ধতা! কোন্ একাকিত্বের কথা বলা যায়!
প্রিয়তমা অপেক্ষায় গর্ভে নিয়ে সাধনার সন্তান,
শিশুর মুখ বাবা দ্যাখেনি। হ্যাঁ ওরা দ্যাখতে দেয়নি।
রক্তস্রোতা নদীর কিনারায়, মুখ থুবড়ে পড়েছিল আগামি পিতার লাশ।
কোন্ বৃদ্ধা একাকিনী মায়ের বুকফাটা চিৎকার বলা যায়
ছেলেহারা কোন্ পিতার অশ্রু শুকোনোর কথা লিখবো?
অজস্র ভাইয়ের রক্তলাল শরীর,
অজস্র বোনের হারানো সম্ভ্রমে সব একাকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন্ যুগল মানুষের কথা বলবো
অথবা কোন্ ছেলেটির প্রিয়তমাকে নিয়ে লিখবো আমি?
আমি কোন্ হৃদয়ের কোন্ ব্যথা জানাবো!
আইন বিভাগের আনিতা ও
ইংরেজি বিভাগের তার স্কুল জীবনের প্রেমিকের কথা কিছুটা বলা যেতে পারে।
কি জানি কেনো রোকেয়া হল থেকে সেদিন
খুব সকালেই বেড় হয়েছিলো আনিতা ;
সাথে ছিলো প্রিয় বান্ধবীও তার,
গায়ে জড়ানো নীল রঙে শাড়ি।
স্বপ্নাতুর দু’চোখে, রেসকোর্সের পথ ধরে হাঁট ছিলো ওরা
হঠাৎ খবর এলো- শহিদ মিনারে বুলেটবিদ্ধ পড়ে আছে আনিতার প্রেমিকের লাশ।
ফিন রক্তে সাদা পাঞ্জাবি হলো লাল।
নিরব নিথর দেহ বুকে নিয়ে
আনিতা বসেছিলো শহিদ মিনারের পাশ।
পৃথিবীর পথে পথে যতো ভালোবাসা ছিলো
আদুরে আঁচল জুড়ে ছিলো যতো মায়া,
সমগ্র বাঁধনেও প্রেমিক তার ফেরে নি সেদিন।
শুধু মুক্তিই লেখা ছিলো হৃদয়ের গভীরে কোথাও।
স্নিগ্ধ কোমল মৃত্যুর বিপরীতে
লেখা হলো এই নাগরিক শহরের এক কোনে
এক তরুণীর একা হওয়ার সকরুন রক্তিম ইতিহাস।
পাঞ্জাবির পকেটে ছিলো রক্তভেজা রুমাল
লেখা ছিলো-প্রিয় বাংলাদেশ; প্রিয় আনিতা, প্রথম স্বাধীনতা।
একটি চিঠিও ছিলো এমন-
প্রথমা আনিতা,
“আর মিছিল-মিটিং নয়, নয় কোনো সভা-সেমিনার অথবা সাহিত্য কথা, তোমায় নিয়ে লেখা কবিতা।
এখন যুদ্ধের সময়। কোনো এক নির্জন রাতে বন্ধুদের সাথে যুদ্ধে যাবো। সম্ভব হলে তোমাকে বাড়িতে রেখে আসতাম। তুমি বাড়ি চলে যেও, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে না। যদি ফিরে আসি এই নাগরিক ফোয়ারায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বিচরণ হবে আমাদের। স্বাধীন এক দেশে বৈশাখ – ফাল্গুনে তোমার খোঁপায় দেবো লাল-সাদা গোলাপ। তোমার বুকের কোমল কুসুমে হবে আমাদের যৌথ শান্তি নিবাস; উদর ছুঁয়ে আসবে আমাদের কাংখিত শিশু সন্তান। যদি পারো, যদি পারো তুমি অপেক্ষায় থেকো…”
না আনিতার প্রেমিক আর ফিরে আসেনি।
সেই স্কুল জীবন থেকে এই প্রথম তাদের আলাদা হওয়া।
সে জানতেও পায়নি আনিতা তার অপেক্ষায় ছিলো কিনা
অথবা নতুন কোরে নতুন কোনো পুরুষের সাথে
ঘর বেঁধে ছিলো কিনা তার কিছুই যায় আসেনি তারপর।
সে ছিলো জাগতিক এসব বিবেচনার অনেক ঊর্ধ্বে এক মানুষ, এক শূন্যযাত্রী মহাকালের।
ঠিক মধ্যরাতে, হল থেকে শহিদ মিনারের পাদদেশে নিয়ে
ঘাতকের নির্মম বুলেটে বিদ্ধ করা হয় তাকে।
আনিতা ও তার স্কুল জীবনের প্রেমিক কে
আর কোনোদিন দ্যাখা যায় নি বিশ্ববিদ্যালয়ে,
শহিদ মিনারে নতুন কোনো দাবি নিয়ে
সাহিত্য সভা অথবা কবিতা উৎসবে একসাথে।
না। আনিতার উদর জুড়ে তার প্রেমিকের কোনো সন্তান পৃথিবীর মুখ দ্যাখেনি।
ক্যাম্পাসে তারা আসেনি আর কোনো বৈশাখ – ফাল্গুনের উৎসবে।
আর কতো রক্তভেজা আঁচল! আর কতো জীবনের বিনিময় নিয়ে বলবো আমি।
আর কতো ভাঙন! আর কতো হৃদয়ের শূন্যতা লিখলে
বলা হবে এক সমুদ্র রক্তের ইতিহাস! বলা হবে এক মানচিত্র স্বাধীনতার অধিকার!
দূর নক্ষত্রের মতো দূরে
একদিন আমরা আর থাকবোনা আমাদের হয়ে
একই অঞ্চল একই শহরে হবেনা আমাদের বসবাস
দূর নক্ষত্রের মতো দূরে চলে যাবো
ভুলে যাবো আমাদের কথা ছিলো কোনোদিন।
অভিমান ভুলে ভালোবাসাবাসি
বৃষ্টিস্নাত রাতে কাছে আসাআসি থেমে যাবে না পাওয়ায়।
আমাদের অজস্র সময় ভেসে যাবে সময়ের স্রোতে
আয়ু কমে গিয়ে সময়ের তীব্রতা ভেঙে
মৃত্তিকা কনায় রূপ নিবে আমাদের শরীর,
পৃথিবীর কূলে আছড়ে পড়বে আরো কতো পরিচয়।
যতো অজস্রতাই আসুক আজকের মতো
লেখা হয়ে গেছে আমাদের যাবতীয় সব
আমরাও ছিলাম পৃথিবীর পথে পথে,
আমাদেরও বসবাস ছিলো আমাদের মতো।
সাদা শরীর ছুঁয়ে আমাদেরও ছিলো
ভালোবাসা মেখে রংধনু আঁকাআঁকি
পৌষের শান্ত বিকেলের মতোই
আমাদেরও ছিলো শান্তির নীড়।
বয়সের মতোই এসবও ক্ষয়ে যাবে ধীরে
নদী ভাঙনের মতো বিলীন হবে আমাদের গভীরতা যতো
সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে দিগন্ত জোড়া আকাশ
তবু আমরাও ছিলাম কখনো কোথাও
পৃথিবীর পথে পথে ভালোবেসে।
–
–
MOHAMAMD FAYSAL