নিউ ইয়ারের ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করা পারুলের একটা নেশা বলতে পারেন।বছর শেষে যেখান থেকে পারে সেখান থেকে ক্যালেন্ডার পাওয়ার জন্য ও পাগল হয়ে ওঠে।নিউজপেপারের সঙ্গে একটা তো পাওয়ায় যায়,তাছাড়া বেশ কিছু দোকান থেকেও সংগ্রহ করে।
সেদিন ভোরবেলা কলিংবেলের আওয়াজ শুনে ঘুমচোখে দরজা খুলে দেখে কেউ কোথাও নেই।এমনিতেই এত কুয়াশা যে দূরে কিছু দেখাও যাচ্ছেনা।’ধ্যাত্তেরি ‘ বলে দরজা বন্ধ করতে গিয়ে নীচে চোখ পড়তেই দেখে গোল করে পাকানো একটা ক্যালেন্ডার।
পারুলের চোখ চকচক করে ওঠে। ও সঙ্গে সঙ্গে ক্যালেন্ডারটা হাতে তুলে নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে।ওর সংগ্রহশালায় আর একটা সংখ্যা বাড়ল।পরে ও খুলে দেখবে কেমন দেখতে এটা।
পারুল গিয়ে আবার শুয়ে পড়ে।যা ঠান্ডা তাতে আরএক রাউন্ড ঘুমিয়ে নিলে মন্দ হয়না।অনেকটা সময় ও ঘুমিয়ে নিয়েছে।বেশ ভালো লাগছে।এবার একটু গরম চা খেয়ে ক্যালেন্ডারটা খুলে দেখতে বসল।বড় অদ্ভুততো ক্যালেন্ডারটা! কয়েকটা তারিখের নীচে ওর চেনাপরিচিত বেশ কয়েকজনের নাম। ডিসেম্বর মাসের পনেরো তারিখের নীচে ওর নামও রয়েছে।’বেশ ইন্টারেস্টিং তো!’-বলে ওঠে পারুল।
তবে কারোর নাম লালরঙ দিয়ে লেখা আবার কারোর নাম নীল রঙে লেখা।মানেটা ঠিক বুঝল না পারুল।একটু চিন্তায় পড়ে গেল ও।আবার খুঁটিয়ে পড়তে শুরু করল পারুল।এবার ক্যালেন্ডারের একদম নীচে খুব ছোট করে কীসব লেখা দেখতে পেল।খালি চোখে দেখা যাচ্ছেনা।আতসকাঁচটা দৌড়ে গিয়ে এনে লেখাগুলো পড়তে লাগল।
এবার পরিষ্কার দেখতে পেল-‘Red=Death,Blue=Accident’-ওর চোখটা ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল।কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরোচ্ছে।ওর নামটাতো লাল রঙে লেখা।তবে কী??ও আর ভাবতে পারছে না।’এটা হতে পারেনা’-পারুল চিৎকার করে ওঠে।
হঠাৎ সজোরে এক ধাক্কা খেয়ে ওর ঘুম ভেঙে যায়।চোখ খুলে দেখে সুজয় ওকে ক্রমাগত ধাক্কা দিয়ে বলছে-‘কী হল?এত চেঁচাচ্ছ কেন?ভয় পেয়েছ?’পারুল ধড়মড় করে উঠে বসে।বলে-‘ভোরবেলা একটা ক্যালেন্ডার পেয়েছি,একটু নিয়ে এস।’সুজয় হাতে করে ক্যালেন্ডারটা নিয়ে আসে।পারুল বলে -‘খুলে দেখতো ডেটগুলোর নীচে লাল নীল কালিতে কারো নাম লেখা আছে নাকি?
‘সুজয় ক্যালেন্ডারটা খুলে বলে-‘এটা একটা নরমাল ক্যালেন্ডার।কিছু এরকম নেই।’-‘কই,আমাকে দাও,আমি দেখব!’-পারুল হাতে নিয়ে দেখতে থাকে।কিন্তু সত্যিইতো কোথাও এরকম কিছুতো লেখা নেই।তবে কী ও ভুল দেখেছিল?
ডিসেম্বরের পনেরো তারিখটাতে তবে যে ও নিজের নাম লাল কালিতে লেখা দেখেছিল।সেটা কী তবে চোখের ভুল ছিল না কোনো ভবিষ্যৎবাণী!পারুলের চোখ দিয়ে জলের ধারা নেমে আসে।