‘অভিমান’ নিছক একটি শব্দ নয়। এর ব্যাপ্তি এবং গভীরতা অনেক অনেক বেশি সুদূরপ্রসারী। অভিমান একমাত্র ভালোবাসার মানুষের প্রতি-ই হয়। আবার অভিমান যদি যত্ন না পায়, যদি মর্যাদা না পায় তাহলে তা জমতে জমতে…..না, না, বরফ নয়, পাথর হয়ে যায়। তখন তা গলাতে যে লীনতাপের প্রয়োজন হয় তা সকলের জানা থাকেনা। সেক্ষেত্রে বিয়োগান্তক কোন ঘটনা দেখবার জন্য আমরা আগাম প্রস্তুতিও নিতে পারিনা। সবকিছুই ঘটে যায় হঠাৎ, আচমকা।
চার-হাত মিলনের সময় দ্বৈত উচ্চারণ হয় -‘যদিদং হৃদয়ং তব, তদিদং হৃদয়ং মম’। ব্যাপারটা ভাবুন যদি, ‘যদিদং হৃৎপিণ্ডং তব, তদিদং হৃৎপিণ্ডং মম’ বলা হতো তাহলে নয় বিজ্ঞানের পরিভাষায় তার একটা বাস্তব অস্তিত্ব থাকত। হৃৎপিণ্ড দেখা যায় কিন্তু হৃদয়! এই অদৃশ্য বস্তুটার ভেতরেই বসত করে ‘অভিমান’। তাই যে শপথ নিয়ে যৌথ যাত্রা শুরু হয় অনেক সময় অভিমানকে ছুঁতে না পারার জন্য তা হয়ে ওঠে এক নিঃসঙ্গ যাত্রার নামান্তর। আছে অথচ নেই, থেকেও নেই। এমনটা বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের ক্ষেত্রেও ঘটে।
‘এ যে রাগ নয়, এ যে অভিমান’…… হ্যাঁ, রাগকে হয়ত প্রকাশ্যরূপে দেখা যায়, তাৎক্ষণিক প্রশমনে প্রলেপও দেওয়া যায় কিন্তু অভিমান!!!!!! রাগ শরীরের একটা অনুভূতির নাম মাত্র যা চটজলদি দৃশ্যমান। কিন্তু অভিমানের অনুভূতি অনেক মৃদু হলেও তার পরিধি অনেক বেশি বিস্তৃত। মানুষ রাগ করতে করতে একসময় রাগের কারন’টা ভুলে যায়, কিন্তু অভিমান’টা থেকে যায়।
আবার অভিমান সবার ওপর করা যায়না। অভিমানের মধ্যে অধিকার নামক বিষয়টি জড়িত থাকে। অভিমানে ভালোবাসা থাকে, ভালোবাসা হারানোর ভয় থাকে। তাই অভিমানে নীরব কষ্ট থাকে যা একটা মানুষকে তিলতিল করে ধংস করে দিতে পারে। কাছের জনের অভিমান হয়েছে আপনি হয়ত কখনো কখনো উপলব্ধি করতে পারেন কিন্তু তাঁর অভিমানের তীব্রতাকে ছুঁতে পারেন না। ছোঁয়ার চেষ্টা করেন মাত্র।
‘না অভিমানে চলে যেওনা / এখনি শেষের গান গেওনা/ এ তিথি এখনো আবেশ জড়ানো / ভেঙে দিতে তাকে চেওনা / অভিমানে চলে যেওনা’…… একটা সুন্দর সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব বাড়াতে অভিমানের চেয়ে বড় কিছু নেই। অভিমান হলো ঝড়ের পর সেই ক্ষতচিহ্ন’টা যা আপনাকে জানিয়ে দেবে ঝড়টা কতটা ভয়ংকর ছিল।
তবে অভিমানে যেহেতু একটা দাবী থাকে এবং তা কাছের মানুষের কাছেই থাকে। তাই অভিমানকে ছোঁয়ার আন্তরিকতা থাকলে ধংসস্তুপ থেকেও অভিমানী’কে ফিরিয়ে আনা যায়। রবি ঠাকুর তো এককথায় এর উত্তর দিয়েছেন-‘যে তোমারে অপমান করে অহর্নিশ / তারি কাছে তারি পরে / তোমার নালিশ্…….