এক কোটি টাকা মাইনে! ছেলের মুখে তাঁর নতুন চাকরির বেতনের কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি বাবা। কিছুক্ষণ কোনও কথাই বলতে পারেননি। ফ্যালফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে ছিলেন ছেলের মুখের দিকে।
ভেজা চোখে ফের জিজ্ঞেস করেন, ‘কত মাইনে?’ ছেলে জানায়, ‘এক কোটি দু’লাখ।’ এ বার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরেন পেশায় সামান্য এক ঝালাই মিস্ত্রি, ভারতের বিহার রাজ্যের খাগারিয়ার চন্দ্রকান্ত সিং চৌহান।
ছেলের নাম বাত্সল্য।
সেই ছেলেই সম্প্রতি মাইক্রোসফটে চাকরি পেয়েছেন। গত ডিসেম্বরে ভারতের খড়্গপুরেই ক্যাম্পাসিং হয়। তার পরে পাঁচ দফার পরীক্ষা শেষে তাঁকে মনোনীত করে বিশ্বের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি ওই সংস্থা।
আই আই টি খড়্গপুরের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ২১ বছরের বাত্সল্য জানিয়েছেন, মাইক্রোসফটের পরীক্ষা মোটেও সহজ ছিল না।
পাঁচটি ধাপ পেরোনোর পরে তাঁকে যখন নির্বাচিত করেন মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ, প্রথমে তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি। ঠিক যেমন তাঁর মাইনের অঙ্কটা বিশ্বাস করতে পারেননি তাঁর বাবাও।
বাত্সল্যের কথায়, ‘ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে আমাকে পড়ানোটা বাবার সার্থক হল।’
ছোটবেলা থেকেই বাত্সল্য পড়াশোনায় বেশ ভাল। বিহার বোর্ডের অধীনে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন তিনি।
মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করার ফলে সরকারি বৃত্তিও পেয়েছিলেন। মূলত বৃত্তি-নির্ভরই ছিল তাঁর পড়াশোনা।
তবে, এ সবের বাইরেও পড়াশোনার ক্ষেত্রে যখন যত টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয়েছে, তাঁর বাবা যে ভাবেই হোক সেটা ঠিক জোগাড় করে দিয়েছেন। ছেলেকে বুঝতেও দেননি।
২০০৯-এ আইআইটি এন্ট্রান্স দিয়েছিলেন বাত্সল্য। কিন্তু, ফল ভীষণ খারাপ হয়। এর পর লোন করে ছেলেকে রাজস্থানের কোটায় একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেন চন্দ্রকান্ত। তার পর খড়্গপুর আইআইটিতে পড়াশোনা।
চন্দ্রকান্তের কথায়, ‘জানেন, কোটা থেকে ছেলের বাড়িতে আসার ট্রেনের টিকিটের টাকাটা শুধু জোগাতে পারতাম। ওখানে ওর থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কোচিং সেন্টারের তিন শিক্ষক করে দিয়েছিলেন।
বাত্সল্য ছাড়াও আরও পাঁচ সন্তান রয়েছে চন্দ্রকান্তের। তাদের কেউই এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়। সকলেই পড়াশোনা করছে। ঝালাই মিস্ত্রি বাবা তাদেরকেও বাত্সল্যের জায়গায় পৌঁছে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আপনার মতামত এর জন্য