‘জেনাস’ নামে একজন রোমান দেবতা ছিলেন – যাঁর মাথার সামনে-পেছনে দু’টো মুখ। এবং ইনি হলেন দরজা বা প্রবেশ-পথের দেবতা। সুতরাং যে-মাসটির মধ্য দিয়ে একটি নতুন বছরে প্রবেশ করা হবে, সেই মাসের নামকরণ ওই দেবতার নামে উৎসর্গ করাই তো যুক্তিসম্মত। ইংরেজি বছরের প্রথম মাস ‘জানুয়ারি’ নামটি এসেছিল এভাবেই। জেনাস থেকে জানুয়ারি।
অবশ্য পয়লা জানুয়ারি থেকে নববর্ষ শুরু হওয়ার রীতি খুব পুরোনো নয়। মাত্র ষোড়শ শতাব্দ থেকে এই রীতির প্রচলন হয়েছে। জুলিয়াস সীজার তখন রোমের সম্রাট। তার আগে পয়লা মার্চ থেকে হতো বর্ষারম্ভ।
প্রাচীনকালে গ্রীকদের মধ্যে একুশে জুন তারিখটিকে নববর্ষ হিসেবে পালন করার রেওয়াজ ছিল। এছাড়া মধ্যযুগে প্রায় সমস্ত ইউরোপীয় দেশগুলিতে নতুন বছরের সূচনা হতো পঁচিশে মার্চ থেকে।
বর্তমান যুগেও বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে বছর শুরু করার প্রথা চালু আছে। ভিয়েতনামে নতুন বছর আরম্ভের তারিখটি হলো পয়লা ফেব্রুয়ারি। ইরানে একুশে মার্চ। আবার রাশিয়াতে চোদ্দ জানুয়ারি। অবশ্য এই তারিখটি জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেব মেনে করা হয়।
ইম্দোনেশিয়াতে আবার বছরে দু’বার নববর্ষ পালিত হয়। চিনদেশেও তাই – বছরে দু’বার। একবার পয়লা জানুয়ারিতে। দ্বিতীয়বার একুশে জানুয়ারি থেকে ঊনিশে ফেব্রুয়ারির মধ্যে যেকোনো একটি দিনে।
চিনদেশে আরও একটি মজার ব্যাপার চালু আছে। চিনারা যে বছরে দু’বার নববর্ষ পালন করে, প্রত্যেকবারই পালা করে তারা পূর্বনির্দিষ্ট বারোটি জীবজন্তুর নামে এক একটি বছরের নামকরণ উৎসর্গ করে থাকে। সেই বারোটি জীবজন্তু হলো – কুকুর, মোরগ, বানর. মেষ, অশ্ব, সাপ, ড্রাগন, খরগোশ, বাঘ, ইঁদুর, বরাহ এবং ষাঁড়।
প্রবাদ আছে, ভগবান বুদ্ধ যখন কুশীনগরে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন, তখন তাঁর মৃত্যুশয্যাপার্শ্বে এই বারোটি জীব কোনো এক অজ্ঞাত কারণে উপস্থিত ছিল। সেই থেকে চিনদেশের লোকেরা এই দুর্লভ ভাগ্যের অধিকারী বারোটি জীবকে দেবতা-জ্ঞানে শ্রদ্ধা করে আসছে।
আপনার মতামত এর জন্য