হাবল বলল,”মিষ্টির রসটা ঠান্ডা ছিল। ওটা গরম থাকলেই দাদুকে আটকাতে পারত না কেউ। কিন্তু কিই বা করার, যা হবার তা তো হবেই। আর একটু জন্য দাদুর খেতাবটা আটকে গেল।”
কিটকিট হাবল আর ক্যাবলকে আশ্বস্ত করে বলল, “কি করবে বল ভাই, যার কপালে যা আছে। এই তো সেদিন একটা বাঁদরের সঙ্গে ভাব হয়েছিল। পেয়ারা গাছে বসে দোল খাচ্ছিল। আমি নিচে বসে বসে একটা গাঁদার চারাকে উদরসাত করছিলাম। হঠাৎ আমার পায়ের কাছে একটা পেয়ারা
পড়তেই হকচকিয়ে গিয়ে ঢুকলাম এলাচের ঝোপে। তারপর সেখান হতে মুখটা একটু বাড়াতেই দেখলাম গাছের উপর একটা অদ্ভুতদর্শন প্রাণী। অনেকটা মানুষের মতো। ব্যাটা আমাকে দেখে দাঁত বের করে হাসছে।
সাহস করে বেরিয়ে এলাম। বেশ ভাবও জমে গেল। ও আমার লোম হতে মিছিমিছি উকুন বাছে আর আমি ওর মুখ দিই চেটে। বেশ চলছিল। হঠাৎ ওর নাকটাতে একটা আলতো কামড় দিতেই ব্যাটা আমার গালে মারল এক চড়। তারপর একলাফে উঠে গেল গাছে। প্রায় তিনদিন ব্যাথা ছিল।”
কিটকিটের কথা শেষ হতেই দাঁড়িয়ে পড়ল দুই ভাই। হাবল ক্যাবলের পিঠে থাকা বোচকা হতে একটা মেডেল বের করে ঝুলিয়ে দিল কিটকিটের গলায় । কিটকিট অবাক হয়ে দেখল দুটো জুতোর ফিতে দিয়ে বাঁধা একটা পেল্লাই সাইজের ঘুঁটে, যার মাঝখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘গাধাশ্রেষ্ঠ’।
দেখেশুনে মুখ হতে কথা বের হল না কিটকিটের । সে একবার ঢোঁকগিলে চোখ বন্ধ করে বসে রইল।
এদিকে ভোর হয়ে আসছে, পাখিরা নিজেদের বাসায় বসে বসে প্রভাতী কীর্তন করছে।
সুব্রত জাগিয়ে দেখে বেলা নাই বাকি।।
হাবল বলল, “তাহলে শুরু করি।”
হাবল আর ক্যাবল তাদের হেঁড়ে গলা নিয়ে ঘ্যাকো ঘ্যাকো শব্দে জুড়ল গান। ‘আ…. আ…’ করে সুর ধরতেই গাছ হতে একটা প্যাঁচা নেমে এসে টেনে ধরল হাবলের কান। বলল, “সারারাত খেটেখুটে যে একটু ঘুমুব তার জো নেই। এই কে রে তোরা ? তোদেরকে জেলে দেব।”
হাবল আর ক্যাবল একযোগে বলল, “বাবা কাকেশ্বরানন্দ।”
প্যাঁচা যেন এবার একটু ঘাবড়ে গেল। সে হাবলের কান ছেড়ে বলল,”ব্যাটা মস্ত ধড়িবাজ। একবার হাটের মাঝে ওর হাঁড়ি ভেঙ্গেছিলাম বলে ও আমার উপর খেপে আছে। খুঁজে বেড়াচ্ছে আমাকে। দিনের বেলা দেখতে কম পাই বলে লড়াইয়ে পারব না রাত হোক তখন দেখছি।” এই বলে উড়ে গেল প্যাঁচা।
-কাকেশ্বরানন্দ-
ওরা তখন গদগদ হয়ে বলল, হ্যাঁ বাবা… ”
হাবল কিটকিটের দিকে ঈশারা করে কিছু একটা বলল। কিটকিট সেটা বুঝতে পারল না। তখন হাবল বিরক্ত হয়ে বলল,”ইনি বাবা কাকেশ্বরানন্দ, হিমালয় ফেরত। ইনি চাইলে তোমার কঙ্কাবতী হতে কণকধুতরো যা বলবে খুঁজে বের করে দেবে।”
কিটকিট তো আনন্দের আতিশয্যে অস্থির। সে ঢিপ করে প্রণাম ঠুকে বলল, “উত্তরে যাব বাবা। সেখানে যে জাদুকর থাকে, সেই জানে কঙ্কাবতীর খোঁজ।”
কিটকিট হকচকিয়ে গিয়ে বলল,”কি বাবা ?”
-“কিছু তো বলুন বাবা।” বলল হাবল।
কাকেশ্বরানন্দ গম্ভীর স্বরে বলল, “সে একবার দেখেছিলাম বটে, মস্তবড় এক জাদুকর। পৌষসংক্রান্তির মেলাতে তাবু পড়েছিল তার। লাল নীল আলোর মাঝে টুপি হতে খরগোশ বের করে আনছিল। অনেকটা তোমার মতোই, – সাদা ধবধবে।”
-“আমার এই লাঠিটার মতো ?” লাঠিটা সামনের দিকে ধরল কিটকিট।
কাকেশ্বরানন্দ লাঠিটাকে অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করে বলল, “হতেও পারে। অতটুকুই ছিল মনেহয় । কই আমাকে দাও তো একবার।”
কিটকিট বলল,”দিদির টিউশুনির দিদিমণি এই লাঠিখানা এনেছিল দিদিকে পেটানোর জন্য। আসার সময় আমি নিয়ে এসেছি।”
কাকেশ্বরানন্দ একবার পাখাদুটো ঝাপটে নিয়ে স্থির হয়ে বসল। এরপর লাঠিখানাকে নাড়াতে নাড়াতে চিৎকার করে আওড়াতে লাগল-
মন্ত্রখানা বারবার আওড়ানোর পরও কোনও কাজ হল না দেখে লাঠিখানা নামিয়ে রেখে বিজ্ঞের মতো বলল,”জাদুলাঠিটা কাজ করলে জাদুকরের খোঁজ পাওয়া যেত। তোমার দিদির দিদিমণি ঠিক কাজ করেনি হে। লাঠিটার জাদুগুণ নষ্ট করে দিয়েছে।”
চলবে……
আপনার মতামত এর জন্য