=================================
‘`নাম?`
‘ মনে নেই?`
`কেন?`
চল্লিশ বছর আগের কথা। আমি তখন বাইশ। প্রথম গ্রাম দেখা। বন্ধু ভজহরির গ্রাম। নাম সোনা পাহাড়।পাহাড় নেই। আছে কিছু টিলা। চারপাশে সবুজ খেত। সবুজ গাছপালা। দূরে ছোটো বড তালগাছের সংসার।কোথাও একা খেজুর গাছ।
জমিতে রুগ্ন চাষীর হাতে লাঙল। রোগা দুটি গরু। আঁকাবাঁকা মাটির পথ চলে গেছে দূর গ্রামে। প্রথম গরুর গাড়ি চড়া। মন প্রফুল্ল। মন আবার উদাস। বড় ভালো লাগছে।
ভালো লেগেছিল ভজহরির বন্ধু বলহরির অনাথ ষোল বছরের শ্যলিকাকে। আমাকে নিয়ে বেরিয়েছে গ্রাম দেখাতে। চন্ডিমন্ডপ, রাধামাধবের মন্দির, চৌধুরীদের দীঘি। বাঁশবন।বিদ্যানিধী প্রাইমারি স্কুল। মনষাতলা।
গ্রামের শেষপ্রান্তে ছোট নদী। কত পাখি সেখানে। মাছ শিকারে মগ্ন তারা। দুটো পাখি একটু শুকনো জমিতে দাঁড়িয়ে আছে। ও বলল. ‘বলতে পারবে কোন পাখিটা মেয়ে কোনটা ছেলে?
আমি বললাম.’ আমি কি করে বলবো? আমি কি গ্রামের ছেলে? `
ও হাসলো। সরল হাসি। এতকুটু দূষন নেই সেই হাসিতে। বলল, ‘যে পাখিটা শান্ত, সেটা ছেলে আর যে পাখিটা ছটপট করছে, সেটা মেয়ে। বুঝলে? তুমি দেখছি কিছু জানো না। `বলে সে আবার হাসতে লাগল। ওর হাসির শব্দে পাখি দুটো উড়ে গেল।
‘জানো ওরা কোথায় গেল?`
‘না। কি করে জানবে?’
‘ওরা বাসায় গেল।’
‘তাই বুঝি?’
‘হ্যাঁ ।কেন গেল জানো? `
আমি কি বলবো? বুঝতে পারছি না। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। সবুজ ধানের মতো কচি উজ্জ্বল মুখ। চোখ দুটো দারুন মায়াবী।জামা পড়া তন্বী শরীরটা দারুন লাবন্যময়ী। আমার খুব ভাল লাগছে। আমি বললাম,’ “কেন গেল বললে না? `
‘বলবো না। কিছু জানে না। ‘
সত্যি আমি তখন জানতাম না। কিন্তু ওর সংগ খুব ভালো লাগছিল। এই ভালো লাগার নাম কি? কে যেন বুকের ভিতর বলে উঠলো, প্রথম ভালো লাগার কোন নাম নেই। তবে চিরকাল বুকের মাঝে জেগে থাকে। মাঝে মাঝে অন্ধকার গুহা থেকে ধূষর প্রজাপতির মতো বের হয়।
এখন আমার চোখের সামনে উড়ছে সেই প্রজাপতিটা।
আপনার মতামত এর জন্য