========
বালির চর নিয়ে সেদিন অত টানাটানি ছিল না। ছিল না জমি মাফিয়াদের দাদাগিরি। ধূ ধূ আর হূ হূ! ঐ দূরে তাকালে বুকটা খালি-খালি হয়ে উঠত সুবলসখার। সুবলসখা মন্ডল। ভাগচাষী কৃষ্ণ মন্ডলের ছেলে। কবে কে ঐ নামে স্কুল- ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল, বাবা ভেবে নিয়ে ছিলেন যদি ওরকম নাম দিলে ছেলেটা পড়াশোনা শিখে মানুষ হয়।
” আশায় মরে চাষা” – এই আপ্তবাক্য সত্যি প্রমাণিত হয় গরীব চাষাভুষোদের জীবনে এই গ্রাম- গঞ্জে। এবারে মেয়েটির বছর দুয়েক বয়স হল। আগের দুটো ছেলে ছিল। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ঐ জ্বর শ্বাসকষ্ট আর দু-তিনদিনের মধ্যেই সুমতির কোল খালি করে চলে যাওয়া। বালির চরের দিকে নজর পড়লেই বুকটা তাই সুবলসখার হূ হূ করে ওঠে! ওর নিচেই চাপা পড়ে আছে কিছু স্মৃতি।
বালির চরের দিকে তাকিয়ে সকালের উজ্জ্বল রোদে দেখল শয়ে-শয়ে কাক মরে পড়ে আছে। চরের নাবাল জমিতে চিনে বাদামের চাষ করেছিল। কাকে গত বছরে আশি শতাংশ খেয়ে নষ্ট করে। বাদবাকি থেকে তবুও দুটো পয়সা পেয়েছিল।
সেই পয়সার লোভে এবারও চিনে বাদামের চাষ পতিত জমিতে। কাশবনের ধার দিয়ে পড়ে আছে সারে-সারে মৃত কাকেরা। বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল। যেদিন বিষ ছড়াবে ক্ষেতে, সুমতি বলেছিল– “আমাদের কপালে যা হবার হবে। তুমি বিষ দিও নাকো জমিতে, সবিতা কদিন পরেই দুইটা বচ্ছর ছাড়াবে”।
একটু ঘোর একটা ভয় অন্ধকার হয়ে ঘিরে ধরেছিল তাকে, প্রায় ছুটতে ছুটতে বাড়ি গেল সুবল। হাঁক দেয়– সুমতি!সুমতি!
সুমতি ভেতরের ঘর থেকে খুব কাঁপা গলায় বলে– সাবির গা-টা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে গো। ভিতরে আইসে দ্যাখো!
সুবলসখা ঘরের দোর দুটোকে শক্ত হাতে ধরে নিজের টাল সামলাতে থাকে। কালরাতে সবিতার তো সামান্য গা গরম করেছিল। চরের জমি তার মনে এক অপার শূন্যতা তৈরী করছিল তখন।
===========
আপনার মতামত এর জন্য