হাতে দশ টাকার টিকিটটা গুঁজে দিয়ে দৌড়ে বাসের গেটের দিকে চলে গেল কন্ডাক্টর। পলাশ টিকিটটা হাতে নিয়ে দেখতেই মাথাটা গরম হয়ে গেল । লকডাউনের পর আনলক শুরু হতেই কলকাতার প্রাইভেট বাসে ভাড়া নিয়ে এমনটাই চলছে। একই দূরত্বের জন্য কেউ নিচ্ছে ন’টাকা কেউবা দশ টাকা। যার যেমন খুশি ।
” ও কন্ডাক্টর ভাই সকালে তো ন’টাকা দিয়ে এলাম, তুমি দশটাকা নিলে কেন ?” বাসের একদম পিছনের সিটে বসা পলাশ চিৎকার করে বলল, সিট ছেড়ে উঠল না। বাসটা মোটামুটি ফাঁকাই। তবু সারাদিন অফিস সামলানোর পর উঠে গিয়ে ঝগড়া করার ইচ্ছা নেই। কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো করতে হবে !
কন্ডাক্টর উত্তর দিল না। হয় শুনতেই পায়নি , কিংবা শুনেও না শোনার ভান করছে। এখন এ সমস্যা নিত্যদিনের।
” ও ভাই কন্ডাক্টর, দশ টাকার টিকিট দিলে কেন ?” আবারও চিৎকার করে বলল পলাশ।
কন্ডাক্টর এবার আর ইগনোর করতে পারল না। গেট ছেড়ে এগিয়ে এলো পলাশের কাছে, বলল ” আমাদের বাসে দশ টাকা দাদা, মালিকরা ঠিক করেছে ।”
” মালিকরা ঠিক করেছে মানে, এ কী মগের মুল্লুক নাকি ! এক টাকা বেশি নেও , একেবারে তিন টাকা !” বিরক্ত হয়ে বলল পলাশ ।
” আপনি কথাটা একদম ঠিক বলেছেন। আপনার কথায় যুক্তি আছে । আমাদের তো কিছু করার নেই দাদা , তবে আপনার বলার জায়গা আছে ।” নরম গলায় কথাগুলা বলল কন্ডাক্টর।
কন্ডাক্টরের কথা শুনেই সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়াল পলাশ, এগিয়ে গেল কন্ডাক্টরের দিকে, কন্ডাক্টর একটু ভয় পেল, হয়ত এক্ষুনি ওর গায়ে হাত তুলবে! কিন্তু বাসের সব যাত্রী এবং কন্ডাক্টরকে অবাক করে কন্ডাক্টরকে জড়িয়ে ধরল পলাশ। পকেট থেকে একটা কুড়িটাকার নোট বের করে জোর করে কন্ডাক্টরের হাতে গুঁজে দিল। তারপর আবার সিটে এসে বসল।
বাসের খোলা জানলা দিয়ে চলমান কলকাতাকে দেখতে থাকল। জানলা দিয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়ায় যেন পলাশের মনে খুশির হারমোনিয়াম বেজে উঠল।
বিয়ে করার সাত বছর পর প্রথমবার পলাশের মনে হল এখনও ওর যুক্তিপূর্ণ কথা বলার জায়গা, বাড়িতে না হোক, দুনিয়া থেকে পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি।
আপনার মতামত এর জন্য