.
.
আজ মোটেই বিক্রিবাটা তেমন হয়নি।শাকের ঝুড়িটা মাথায় তোলার আগে শুকনো শাকের আঁটি গুলো দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস পরে মণিরুলের । লতিফা কোন সকালে উঠে আগান বাগানে ঘুরে এই শাক কটা তুলে এনেছে।
ছেলে হানিফ বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা হয়ে বহরমপুর শহরে বাসা বেঁধেছে । আব্বা-আম্মা ওদের এখন বোঝা ! কে কারে দেখে?
ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় মণিরুল । শাক বেশিরভাগই ফেলে দিতে হবে, এখনই শুকিয়ে এসেছে।আজকাল মানুষ আর হিংচে, খারকোণ, কলমী খেতে চায় না ।
মণিরুলের বয়স হয়েছে আর মাঠে-ঘাটে কাজে যেতে পারে না।এই শাক বেচাই সম্বল।যতদিন পেরেছে মাঠে ঘাটে মুনিশ খেটে পেট ভরিয়েছে, পরিবার ও প্রতিপালন করেছে, ছেলেকে লেখাপড়াও শিখিয়েছে। এখন সেই ছেলে কোম্পানির চাকরি করে, মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরে, হাতে বড় ফোন। তবুও মাস গেলে বাপ মাকে একটা টাকাও পাঠায় না । ওদের বুড়ো বুড়ির যে কি করে চলবে সে কথা ভুলেও ভাবে না। আগে মাঝেসাঝে দেখা করতে আসত এখন তাও আসে না ।
লতিফা জেসমিনাকে গালিগালাজ করে। মণিরুল বোঝায়, “নিজেরই যদি কানাকড়ি হয় তবে পরের মেয়ের আর দোষ কি?”
ক্লান্ত পায়ে বাড়ির পথে হাঁটা দেয় মনিরুল,ভাবে আজও তাহলে শাক সেদ্ধ ভাত । যদি একটু তেল থাকে তো ঝাল পুড়িয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিব্যি চলে যাবে।
ওমা বাড়িতে ঢুকতেই একটা সুন্দর গন্ধ এসে নাকে লাগে । এতো মাছের গন্ধ? আহা ! লতিফার রান্নার হাতটা তোফা! যা সুন্দর করে রাঁধে না! সামান্য লাউয়ের খোসা ভাজা বা শুঁটকি বাটা দিয়ে এক থালা ভাত খাওয়া যায় !
কিন্তু মাছ পেলো কোথায় ?ধরেছে নাকি? লতিফা তো ওইসব পারে না !
মণিরুলকে আসতে দেখে লতিফা বদনা এগিয়ে দেয়। হাতে মুখে জল দিয়ে একটু বারান্দায় বসে মণিরুল জিরিয়ে নিতে চায় কিন্তু লতিফা তাড়া দেয়, “হানিফের বাপ, তারাতারি গোসল কইরি এইসো,
খেইতি দি”, মনিরুল চকচকে মুখে প্রশ্ন করে, “হানিফের আম্মা ,মাছ রেইধিঁচিস মনে হচ্ছে? বাস ছেইড়িচে! কিন্তু মাছ পেইলি কই ?”
লতিফা একগাল হেসে বলে, “আর বলো নি, পুকুর ধারে বাসন মাজতে গিইয়িচিলাম, দেখি শম্ভু ছিপে মাছ ধইরচি। আমি একটু উঁকি দিয়ে দেইখলাম। বেশ অনেকগুলো মাছ খলবল করতিচে। সেই শম্ভুই দিল”।
মণিরুল চিনতে পারে । শম্ভু হানিফের বন্ধু । আগে বেশ কয়েকবার বাড়িতে এসেছে হানিফ থাকতে । ও নিজে বিয়েও করেছে, কিন্তু মা বাপ কে ছেড়ে যায়নি । মাঝে মাঝে রাজমিস্ত্রি খাটে আবার মাছটাছ ধরে বিক্রিও করে।
ছেলে না হোক ছেলের বন্ধুর দৌলতে আজ বেশ কয়েকদিন পর একটু মাছের ঝোল ভাত খেতে পারবে ওরা। পেট ভর্তি খিদে নিয়ে তাড়াতাড়ি এক খাবলা তেল মাথায় দিয়ে গামছা কাঁধে পুকুরের দিকে পা বাড়ায় মণিরুল।
.
.
আপনার মতামত এর জন্য