বেশ কিছু দিন আগে রামিজের বোনের বিয়েতে একজন জোব্বা পরিহিত মোলবি এসেছিল। বিয়ের দিনধান ঠিক হওয়ার আগে তাদের কথাবার্তা শুনে রামিজের বাবা খুব বিস্মিত হলেন। এমন অশুভ সময়ে বিয়ের লগ্ন ভঙ্গ তো ভাল লক্ষন নই! আমাদের দেশে এখনো একটি কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। বিয়ের দিন কোন অঘটন ঘটলে অবিবাহিত মেয়ে বা ছেলের জীবনে অশুভ শক্তি কাজ করে। এমন ঝেড়েফেলা কথা অবিশ্বাস্য মনে করি। যায় বিরহে দিন থেকে একটুকরো হাসি আর থাকলো না কপালে। সুখী দাম্পত্য জীবন যেন ম্লান হয়ে যাবে অশুভের আস্ফালনে।
তিন ভাই আর এক বোন ছিলো রামিজের। মেজো ভাই খুব দাম্ভিক প্রকৃতির এবং কুসংস্কার বিশ্বাসী। এখনো তার কাছে বিজ্ঞান একটি কুসংস্কার। প্রচলিত কিছু কুসংস্কার নিজেই রঙচঙে করে গ্রামে নামও কমিয়েছে রামু। রামুর স্বভাবে কোন ধর্মীয় গোড়ামীর লেস মাত্র নেই। বিজ্ঞান মনস্ক ছেলে ধর্মের ধারে কাছে ঘেঁষেনা। ধর্মীয় ব্যাপারে কোন প্রকার বাধা বা আদেশও করেনা। রামু যেমন বিজ্ঞানে বিশ্বাসী তেমনি ধর্মকে অবমাননা করে । নাস্তিকতা তার কাছে ধর্মের মত,কাছের মানুষ প্রিয়জনের জন্য অনেক কিছুই করেছে রামু। ধম্মিও সহনশীলতা নেই। বিয়ে নিয়ে, মৃত্যু নিয়ে, জন্ম নিয়েও তার তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া থাকেনা। যেমন একটি শিশু জন্মালে কানে আযান দেওয়ার রেওয়াজ ইসলাম ধর্মের রীতি ।
সেই রীতি অনুযায়ী তার কানেও আযান দেওয়া হয়েছে। এখন বিজ্ঞানের প্রভাবে ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তা ধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ধর্ম প্রতি ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা তাকে যেন অ-ধর্মান্ধ করে দেয়। রামুর মেজো ভাই রামিজ খুব ধার্মিক। পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ ঠিকমতো আদায় করে। কিন্তু ধর্মীও অনুশাসন গুল মেনে চলার চেষ্টা করে । তার বড় আফস রামুকে নরকের দরজা ছেড়ে আসার জন্য যেন সে নিজেই দায়ী। আপন ভাই হইয়েও বিপথে চলে যায় এ চিন্তা মাঝে মাঝে তাকে ক্ষতবিক্ষত করে।
দুয়া করে আল্লাহর কাছে তার হেদায়ত কামনা করে। একদিন রামু উত্তর প্রদেশের এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে বাড়ী ফেরার সময় ফইজাবাদ স্টেশনে ভয়ংকর ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটল। আশ্চর্যজনক ভাবে সে বেঁচে গেল এবং রেল কর্মী সহ অনেকেই মারা গেল। এই ঘটনা তাকে ধর্মের কাছে টেনে আনে । এটাই ছিল তার ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের প্রাথমিক অবস্থা । এবার তার টনক নড়ে উঠলো, নিজের মনে একটি প্রবাদ ঘুরপাক খাচ্ছে” রাখে আল্লাহ,মারে কে”। প্রথমেই অবাক করা ঘটনা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল এবং অন্যান্য যাত্রীদের মত তারও যে মৃত্যু হতে পারত সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারল রামু।
ট্রেন দুর্ঘটনা সময় লাইনচ্যুত হওয়া গাড়ির চাকা ও সামনের অংশ দুমড়ে জঙ্গলের পরে যাওয়ার শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহ কে ডেকেছেন। এমন অনেক দুয়া কালম পড়েছেন নিজে। এমতবস্থায় নিজে স্ব শরীরে বেঁচে থাকা টহল দেখে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিয়ে ধর্ম মুখী হয়ে গেল রামু। বেশ ভালই খুশি হল রমিজ। এক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কখনোই অপ্রীতিকর কাজ করে না। অথবা ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক নিজেকে আজও পরিচালিত করে আসছে।।
.
আপনার মতামত এর জন্য