একটি কুকুর তাঁর মালিককে খুঁজতে ২৫ দিন ধরে ৬০ কিলো মিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিল। আসলে হাংঝৌয়ের বাসিন্দা মিস্টার কুই ও তাঁর স্ত্রী টং লু ওই পোষ্যটিকে নিয়ে গাড়িতে করে গ্রামের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন।
মাঝে চা পানের জন্য তাঁরা একটি সার্ভিস স্টেশনে গাড়ি দাঁড় করান। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে ওই কুকুরটিও গাড়ি থেকে নামে। সার্ভিস স্টেশন থেকে বেরিয়ে ওই স্বামী-স্ত্রী ভেবেছিলেন, প্রতি বারের মতো এ বারও তাঁদের প্রিয় কুকুর ডউ ডউ এতক্ষণে নিশ্চয়ই গাড়িতে উঠে পড়েছে। তাই মিস্টার কুই চালকের সিটে বসার আগেই তাঁর স্ত্রী টং লু তাঁর স্বামীর পাশের সিটে বসে পড়েছিলেন। একবারও পিছন ফিরে দেখেননি তাঁদের পোষ্যটি পিছনের সিটে আছে কি না।
ঘণ্টাখানেক পরে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে তাঁদের খেয়াল হয়, ডউ ডউ গাড়িতে নেই। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা গাড়ি নিয়ে রওনা হন সেই সার্ভিস স্টেশনে। ওখানকার লোকজনদের কাছে গিয়ে খোঁজখবর নেন তাঁদের পোষা কুকুরটিকে ওঁরা দেখেছেন কি না। কিন্তু ওঁরা বলেন, না, আমরা কোনও কুকুরকে দেখিনি। তাঁরা দু’জনে মিলে তখন ওই কুকুরটির নাম ধরে জোরে জোরে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন। আশপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু না, ডউ ডউকে কোত্থাও পাওয়া যায়নি।
কুকুরটিকে হারিয়ে তাঁরা যখন মনমরা হয়ে বাড়িতে কাটাচ্ছেন, একদিন-দু’দিন নয়, একটানা ২৫ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু ভুলতে পারেননি কুকুরটির কথা। দু’জনেই বারবার আফসোস করছেন গাড়ি ছাড়ার সময় কেন যে তাঁরা পিছনের সিটের দিকে তাকাননি! ঠিক তখনই, তাঁদের কানে ভেসে আসে ডউ ডউয়ের ডাক। তাঁরা এ ওঁর মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করেন। আমরা কি ঠিক শুনছি! তড়িঘড়ি দরজা খুলে দেখেন, বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে— তাঁদের অত্যন্ত প্রিয় কুকুর ডউ ডউ। চোখ-মুখ যেন কেমন হয়ে গেছে! কী রকম উদভ্রান্তের মতো চাহনি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এ ক’দিন তার পেটে কোনও দানাপানি পড়েনি।
এতটাই ক্লান্ত যে দাঁড়িয়ে থাকার মতো অবস্থাতেও নেই। তাকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান কুই ও তাঁর স্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গে বুকে জড়িয়ে নেন। তাঁদের বাড়ি থেকে ওই সার্ভিস স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলো মিটার। তার মানে, সে দিন ও যেখানেই থাকুক না কেন, মনিবের গাড়ি রওনা হয়ে গেছে টের পেয়েই ওই গাড়ির পেছনে ছুটতে শুরু করেছিল সে। তার ছোটার চেয়ে গাড়ির গতি যেহেতু অনেক বেশি ছিল, তাই কিছুটা যাওয়ার পরে নিশ্চয়ই সে ওই গাড়িটিকে আর অনুসরণ করতে পারেনি।
পথ হারিয়ে ফেলেছিল। তার পর না খেয়েদেয়ে একটানা ২৫ দিন ধরে এ রাস্তা ও রাস্তা সে রাস্তা ধরে পাগলের মতো খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে এসে পৌঁছেছে মালিকের বাড়িতে। এটা জানাজানি হওয়ার পরে তাঁদের আত্মীয়স্বজন এবং এলাকার লোকজন মিস্টার কুই এবং তাঁর স্ত্রী টং লু-র গাফিলতি নিয়ে সে ভাবে মুখ না খুললেও, ডউ ডউয়ের এই প্রভুভক্তির জন্য সবাই ধন্য ধন্য করছেন।
আপনার মতামতের জন্য