এই নিয়ে বিশ বার হলো তোমার ।
আমি রাগে চোখ কটমট করে বললাম, টিস্যু বের করো। এত কথা বলো কেনো? তোমার এই, এই কথার জন্য আমি তোমায় – কথাটা শেষ করার আগেই প্রবলবেগে হাঁচি এবং হাঁচির তোড়ে দাঁতের কোণে লেগে জিহ্বা কেটে গেলো।
ইশ্, অনেকটা রক্ত বের হচ্ছে তো, চল চল ফার্মেসিতে।
মেজাজ ভয়াবহ রকম খারাপ। কিন্তু এই গাধার বাচ্চার সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই । ভ্যার ভ্যার করতেই থাকবে। এবং যতক্ষণ ফার্মেসিতে না যাওয়া হবে ততক্ষণ কানের পোকা নড়িয়ে দিবে। আজব ব্যাপার!
ছেলে মানুষ এত কথা বলবে কেনো?আমি গালে হাত চাপা দিয়ে রাস্তা দিয়ে গটগট করে হাঁটছি আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম এর সাথে আর না। এই নিয়ে আমার সতের বার এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া । কিন্তু এবারের টা সত্যি সত্যি । ওফ্,কথা বলে পাগল করে দিচ্ছে।
আরে নোরা, তুমি দেখি আমায় রেখেই চলে যাচ্ছো। বুঝি না তোমার হুটহাট কি যে হয়।আমি কি কোন দোষ করেছি?
গাধার বাচ্চা তুই চুপ কর। অসহ্য। আমি এখন সত্যি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং যেই ব্যবহার তানিমের সাথে মাত্র করলাম তারপর পিছনে তাকানোর কোনো মানেই হয় না।
তুই কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তানিমের সাথে আর কথা বলবি না?
হাঁচ্চো – নাক কোনরকমে টিস্যু দিয়ে মুছে মাথা টেবিলে রেখে বললাম, আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আমি পুরোপুরি হতাশ।
নে, ধর।
আমি অনিতার হাত থেকে বাক্সের শেষ টিস্যুটা নাকে ঘষে বললাম , আমি কেন – পৃথিবীর কোন মেয়ে ওর সাথে থাকতে পারবে না এবং থাকা উচিত না। ছেলে মানুষ কেন এত কথা বলবে? কথা বলবে মেয়েরা। ফরফর করে কথা বলবে ।কিন্তু না, আমার ক্ষেত্রে উল্টা হলো! তানিম সারাদিন কথা বলে। ও জাস্ট –
থাক, তোর মাথা এখন গরম আছে। সিটিন খেয়ে ঘুম যা।
সতেরতম বার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। অতএব আজ রাতে একটা শান্তির ঘুম হবে। আহাম্মক মানুষের ধারে কাছে থাকাও উচিত না।ভুল হয়েছে , অনেক বড় ভুল।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আমি পুরোপুরি শান্তিতে বাস করছি। একদম লাইফ জিংগালালা টাইপ অবস্থা । কিন্তু নির্বিঘ্ন সুখের মনে হয় একটা অসুখ আছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন বকবক করুক । আমি ধমকাই , তারপর চুপচাপ অভিমান হোক। একটু বোকামি , রাগারাগি – কিছু একটা হোক।
গল্প কিংবা উপন্যাস হলে দেখা যেতো নায়ক সব ইগো ভুলে নায়িকার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু জীবনটা গল্প ও না, উপন্যাস ও না। তাই তানিম আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেনি। মন জানি কেমন লাগছে। এরকম হবে কেনো?
না জানি কিসের ও লাগি প্রাণ করে হায় হায়… আশ্চর্য ! রুমে গান বাজাচ্ছে কে? নিরু? আমি বারান্দা থেকে রুমে গিয়ে ঠাস করে নিরুর গালে চড় বসিয়ে দিলাম । নিরু অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ওর চোখের দৃষ্টিটা অসহ্য লাগছে ।
টিনএজ বয়সী মেয়েদের অভিমানের দৃষ্টি ভয়াবহ। মা আসার আগেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ঝটপট রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম । এবার যা খুশি হোক, নিরু কাঁদবে তো কাঁদুক । আমি একা কষ্ট কেনো পাবো? সবাই পাক একটু কষ্ট ।
ওই গাধা, ওই
হুম, গাধাই তো আমি।
রাগ?
তানিম কথার উত্তর না দিয়ে গটগট করে চলে গেলো নিজের মেসে।
আমি বুঝতে পারছি না কি করবো। ছেলেদের রাগ কিভাবে ভাঙায় তার উপর কোন বই বা টিউটোরিয়াল তো কখনো পাই নি। আকাশের যা অবস্থা , যখন তখন ঝুম বৃষ্টি নামবে। আমি কি ওর মেসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো? এক মিনিটের জন্য বেরুতে বলছিলাম , তাই এক মিনিট শেষ হওয়ার সাথে সাথে চলে গেলো । গত ষোল বার বিভিন্ন ভাবে আমার রাগ ভাঙিয়েছে এবার না হয়…
টিপিটপ বৃষ্টির পর ঝুম বৃষ্টির ধারা। মাথায় জেদ ভর করছে, আমি ত্রিশ মিনিট ধরে ভিজছি।চোখের জল আর বৃষ্টি মনে হয় এক হয়ে যাচ্ছে । অবশ্য তফাত করার চেষ্টা ও আমি করছি না।
কাঁধে একটা স্পর্শ অনুভব করলাম । পিছনে তাকালাম, তানিম আমার কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বলল, এবার কি আমায় মেস ছাড়া করবে? মেসের সবাই তো মোটামুটি দেখলো তুমি কি পাগলামি করছো। সবাই তো ভাববে, কি না ভালোবাসো আমায়! হাহ্।কিন্তু কাজটা ঠিক করোনি।এখন যে ভিজলে, তার পর তোমার আবার ঠান্ডা আবার এ থেকে হাঁচি আবার…
আমি ফিক করে হেসে দিলাম । জানি আমাদের সম্পর্কটা আবার আঠারো বারের মতো ভাঙতে যাচ্ছে । ভাঙুক। ভাঙা থেকে যদি নতুন ভালোবাসা হয়, তাহলে বার বার ভাঙুক।