‘আপনি সিগারেট খান?’ ডাক্তার সরাসরি প্রশ্ন করলেন।
‘খাই মানে? দিনে দু তিন প্যাকেট সিগারেট উড়ে যায়। ‘
ডাক্তার এ্যপ্রোন থেকে হাত বের করে বললেন, ‘এবার এসব ছাড়তে হবে।’
‘কেন?’
ডাক্তার গলা ভারী করে বললেন. ‘সম্ভবত আপনার গলায় – -‘
‘বুঝেছি। ক্যানসার। তাই তো?’
‘সেই রকমই মনে হচ্ছে। তবে প্রাইমারি স্টেজে আছে। এবার ছাড়তে হবে। ‘
‘ সিগারেট ছাড়বো না। একটাও কমবে না। আমি একজন লেখক।সুখে যন্ত্রণায় অনুভব করতে চাই জীবনকে। আমি স্বার্থপর নই যে সুখে থাকবো, যন্ত্রণায় নেই। ‘
ডাক্তার পেশেন্টের গলা আরো একবার পরীক্ষা করে বললেন.’ সিগারেট না ছাড়লে সবর্নাশ হয়ে যাবে। আপনি বুঝতে পারছেন না। ‘
‘ খুব বুঝতে পারছি । আমি অমৃতে আছি, গরলেও আছি।’
‘ তাহলে আপনি ক্যান্সার স্পেশালিষ্ট এই হাসপাতালে এলেন কেন? ‘
‘ আমি তো আসি নি। আমার স্ত্রী নিয়ে এসেছেন। ‘
‘ আপনি তাকে গলার ব্যাথা বা কিছু একটা বলেছেন নিশ্চয়?’
‘না। আমি তাকে কিছু বলেনি। বেসিনে রক্ত দেখে তিনি বুঝেছেন। এখানে এনেছেন। ‘
‘ তিনি অসুখের গুরুত্বটা বুঝেছেন। তার কথা ভেবে সিগারেট ছাড়ুন’।
‘ আগেই বলেছি আমি একজন লেখক। জ্যোৎস্নার যেমন সৌন্দর্য আছে, আমাব্যাসারও একটা নিজস্ব সৌরভ আছে। জীবন তো শুধু আলো নয়। পৃথিবীর মতো আলো অন্ধকার ময়।
ডাক্তার বিস্ময় ভরা চোখে দেখতে লাগলেন। ক্যানসার শুনলে সবার মুখ সাদা হয় যায়। লেখকের মুখে সকালের রোদ। বয়স ষাটের কাছাকাছি। চোখ দুটো বড় ধারালো।ছুরির মতো। সব কিছু যেন ফালা ফালা করে দেখতে চান। গলায় আত্ম বিশ্বাসের গাম্ভীর্ষ। গালে পুরো দাড়ি। চুল অবিন্যস্ত।যে কেউ দেখলে অনুমান করবে এনি একজন সাধারণ মানুষ নন। লেখক কবি সাহিত্যিক কিংবা আস্টিস। কিন্তু ডাক্তার হিসেবে তার দায়িত্ব তিনি ভোলেন কি করে? বললেন, ‘লেখার সংগে সিগারেটের কি সম্পর্ক? সিগারেট না খেলে কি লেখা যায় না?
‘ কেন যাবে না?
‘তাহলে আপনি কেন সিগারেটটা ছাড়তে চাইছেন না?
‘ এ কথার জবাব আমি দিতে পারবো না। অনেক কিছু জীবনের সংগে এমন জড়িয়ে যায় যে তাকে ছাড়া যায় না। এ অনেকটা
নিজের ছায়ার মতো। কেউ কখনো নিজের ছায়াকেত্যাগ করতে পেরেছে? ডাক্তার বললেন’ আপনি লেখক মানুষ। আপনার সগে তর্কে পারবো না।’ ছাড়তে না পারেন সংখ্যাটা কমান’।
‘সেটাও সম্ভব নয়। একটাই তো জীবন। শুধু স্রোতে ভাসবো? । উজানেও তো সাঁতার কাটতে হয়। তবে না আপনি বুঝবেন জীবন একটা চ্যালেঞ্জ। লেখক যদি চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পায় তবে সে কিসের লেখ্ক?
ডাক্তার কোন জবাব দিতে পারলেন না। একটা অনুরোধ রাখবো?
‘বলে ফেলুন।’
ওষুধ গুলো তো খাবেন?
‘লেখক কোন উওর দিলেন না। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
ডাক্তার বললেন,’ আপনার লেখা একটা বই দেবেন? পড়বো।’