” অবশেষে একটু শান্তি পেলাম। বলতে পারিস একটা অস্ত্র পেলাম।” স্বস্তির শ্বাস ফেলে প্রথম বন্ধু বলল।
” কেন রে কী হল। কী অশান্তিতে ভুগছিলি !” অবাক হয়ে দ্বিতীয় বন্ধু জিজ্ঞেস করল ।
” খবরের কাগজ পড়িস না, টিভিতে নিউজ দেখিস না ? এই দুনিয়াতে থাকিস নাকি অন্য কোথাও ?” বিরক্ত হয়ে প্রথম বন্ধু পাল্টা প্রশ্ন করল।
” আহা, চটছিস কেনো! খবরের কাগজও পড়ি, টিভিও দেখি, তবে শুধু খেলার খবর । অন্য খবরে আমার তেমন কোনও ইন্টারেস্ট নেই। কী বলতে চাইছিস খুলে বল ।” দ্বিতীয় বন্ধু বলল ।
” এই যে এত মাস ধরে করোনা ভাইরাস আমাদের উপর দিয়ে , সারা দুনিয়া জুড়ে বুলডোজার চালাচ্ছে, কত নামি- অনামি লোক মারা পড়ল, কত লোকের চাকরি গেল, কত লোক মাইলের পর মাইল হেঁটে শুধু প্রাণটুকু নিয়ে বাড়ি ফিরল, কত লোক বেঘোরে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তাতেই জান খোয়ালো, সেসব খবর রাখিস নাকি ফুটবল-ক্রিকেট নিয়েই মেতে আছিস ?” প্রথম বন্ধু ব্যাখ্যা করে জানতে চাইল ।
” করোনার কথা জানব না কেনও! আমিও তো তিন মাস বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি। এপাড়া-ওপাড়া-সেপাড়ায় কত লোক মারা গেল। এখনও তো কাজ এগোচ্ছে কচ্ছপ গতিতে। প্রথম দিকে সব খবরই রাখতাম। তারপর বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিয়েছি। এখন নতুন কী হল!” দ্বিতীয় বন্ধু জিজ্ঞেস করল ।
” এখন হল এই যে, বিজ্ঞানীরা করোনার ভ্যাকসিন বের করেছেন। মানুষকে দেওয়াও শুরু হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সবাই ভ্যাকসিন পাবে। তারপর আর করোনার ভয় থাকবে না । তাইতো একটু শান্তি পেলাম। তুই কী আকাশের দিকে তাকিয়ে চলিস !” প্রথম বন্ধু স্বস্তির কারণ বলল।
দ্বিতীয় বন্ধুর তবু স্বস্তি হল না, কেমন একটা আনমনা হয়ে বলল ” জানিস তো করোনার থেকেও একটা বড় ভাইরাস আছে, খিদের ভাইরাস। পুরো দুনিয়াতে কত মানুষ না খেতে পেয়ে, অপুষ্টিতে রোজ মরছে, নাহলে মরার জন্য অপেক্ষা করছে। করোনার ভ্যাকসিন এসেছে খুব ভালো কথা, কিন্তু যেদিন খিদে ভাইরাসের ভ্যাকসিন আসবে, একটা মানুষও আর না খেতে পেয়ে মরবে না, সেদিন আমি পরম শান্তি পাব। “