আর্তনাদ উঠছে– ‘আত্মসমর্পণ করতেই হবে’। কিন্তু কেন করবো আত্মসমর্পণ? এই দুর্যোগে এই সংকটে বিদ্যা বুদ্ধি বিবেক জলাঞ্জলি দিয়ে আত্মসমর্পণ করে আত্মরক্ষার হয়ে বিচার চাইবার অধিকারকে কেন বিসর্জন দেব ঐ নেশাগ্রস্ত রাজনৈতিক তথা সামাজিক জরাজীর্ণ দৈত্যের পদতলে? কেন- কেন- কেন?
মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডব, রামায়নের রাম, কৃষ্ণভক্ত প্রহ্লাদ নানা অবিচার সহ্য করেও আত্মসমর্পণ করেননি। তলে তলে শক্তি সঞ্চয় করে নীতহীনতাকে পরাজিত করেছেন। নবজীবনের সূর্যালোকে পৃথিবীকে করেছেন উদ্ভাসিত। দূর্নীতি পরায়ন কৌরবকূল সংখ্যা ধিক্যে পান্ডবদের থেকে যোজন দূরত্বে হলেও মহাকালের নিয়মে অকৃতকার্যতায় অশ্রুপাতকরেছে। বনবাসী রাম বানর সেনার সহযোগে লঙ্কা বিজয়ী হয়ে সীতাকে উদ্ধার করেছেন। আর প্রহ্লাদের জন্য স্বয়ং ঈশ্বর নিজেই নৃসিংহ রূপে প্রেমকে, সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাহ’লে আমরাই বা এত তাড়াতাড়ি ধৈর্য হারিয়ে আত্মসমর্পণ করবো কেন, কোন দুঃখে!?
গল্পে গাথায়, উপন্যাসে, চলচিত্রে দেখেছি পড়েছি শিখেছি ধৈর্যের অটল নায়কের চরিত্র। যিনি শারীরিক, মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে উঠে, বিভীষিকাকে নস্যাৎ করে বিস্মৃত অতীতকে স্মৃতির মণিকোঠায় প্রতি শোধের স্পৃহায় উজ্জ্বল করেছেন। নবজীবনের স্রোতে বিস্তৃত তটভূমির মাঝে জয়পতাকা হাতে মূল্যবোধকে সম্পূর্ণ মর্যাদা দিতে পেরেছেন। এ তো রূপকথা নয়, এ তো অবিশ্বাস্য নয়– প্রমাণিত সত্য। অতএব ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে কর্মে উদাসীন থেকে আত্মসমর্পণ করা– মৃত্যকে বরণ করার মতোই লজ্জাকর ও ঘৃণ্য অপঘাত ছাড়া আর কিছু নয়।
পৃথিবীতে এমন কোন ব্যক্তি, এমন কোন জাতি নেই যার বা যাদের জীবনে দুঃখ–লাঞ্ছনা- ব্যর্থতা- হাহাকার আসেনি। বর্ণ বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়ে নেলসন ম্যান্ডেলা দীর্ঘ২৬ বছর অন্ধকার কারাগারে দিন কাটিয়েছেন। তবু নীতিহীনতার পায়ে নিজেকে বিলিয়ে দেননি। অবশেষে জয়ী হয়েছেন তিনিই। বিশ্ব ধর্ম মহাসম্মেলনে ব্রাত্য হয়েও শেষে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন সনাতন হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি আজ বিশ্ববরেণ্য। কিন্তু এ পথটাও যে খুব সহজ সরল মসৃণ ছিল না তা তো আমরা প্রত্যেকেই জানি।
আমাদের স্বপ্ন আজ ভুলুণ্ঠিত। দারিদ্র, মিথ্যাচার, ব্যভিচার এবং পাশ্চাত্যের খুল্লামখুল্লা যৌনতার প্রাচুর্য আমাদেরকে পলে পলে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বরূপ দেখার পর আমরাও যুদ্ধে দাঁড়িয়ে অর্জুনের মতো বলবো–” আমি নিমিত্ত মাত্র। হে প্রভু, আমাকে শক্তি দাও, সাহস দাও– অন্যায়কারী অপরাধীর পথ যেন রুখে দিতে পারি। এই দীর্ণ জীর্ণ বাংলাকে যেন আবার সবুজের সমারোহে প্রতিভাত করতে পারি: মানবতাহীন প্রেমহীন ভগ্নস্তূপের মাঝে জীবন প্রতিষ্ঠা করতে পারি। সত্য ন্যায় ধর্মকে দিগ্বিজয়ী প্রতিভায় কীর্তি র সফল তুঙ্গে তুলে ধরতে পারি। হার তবু মানব না, আত্মসমর্পণ করবো না “!
নবজীবনের পুনশ্চ চিন্তায় আত্মাকে যেন সংকট থেকে পরিত্রাণের পথ দেখাতে পারি।