ঘরের পাশে রাস্তার ধারে ট্যাক্সি রেখে শম্ভু বলে – না আজও সে রকম ভাড়া হল না। কি করে মালিককে বোঝাব কে জানে?
কথা শুনে মালতী কিছু বলার আগে বাইরে কাটা স্বপন চিৎকার করে – কি রে শম্বা বেরিয়ে আয়।
শম্ভু বেরিয়ে আসতেই বলে – কি রে? তোর খুব চর্বি জমেছে মনে হয়। আমাদের ছেলেদের চাঁদা দিস নি কেন? এখানে কি ফোকটে থাকার জায়গা? আমাকে আসতে হল। দে পাঁচশ দে।
শম্ভু মাথা গরম করে। তাই মালতী বলে – এই লকডাউনে কোন আয় নেই। রেশনও ঠিক মত পাচ্ছি না। ট্যাক্সির ভাড়া হচ্ছে না। আমাদেরই চলছে না।
স্বপন আরো জোরে বলে – আরে আমাদের তো এটাই আয়। আমরা বুঝি। তাই গত চার পাঁচ মাস আসি নি। কিন্তু পূজোর মুখে না বললে শুনব না। না হলে —
আর কিছু না বলে কলতলায় বাসন মাজছিল শম্ভুর মেয়ে মিনু তার দিকে তাকিয়ে স্বপন ও তার দলবল ভাঙা বেড়ায় লাথি মেরে চলে গেল।
পরদিন কথাটা মিনু ভিক্টরকে বলল। আনমনে কি যেন ভাবতে ভাবতে ভিক্টর বলে – চলো আমরা গাছের ঝোপে বসি।
প্রথম প্রথম ভিক্টর বেশ মিষ্টি মিষ্টি কথা বলত। বলত – আমাদের এই বস্তিকে উন্নত করতে হবে। তোকে আমি বাবুদের মত ফ্ল্যাটে তুলব। আমরা প্রেমের মিশাল গড়ব।
আর এখন ঝোপের আড়ালে গল্প করার ছলে শুধু গায়ে হাত দেয়। বেশ কয়েকবার খুব কষ্টও দিয়েছে। মিনু ইস্ততত করছে দেখে ভিক্টর বলে – আরে চিন্তা করো না। আমি স্বপনদার সঙ্গে কথা বলব।
মিনু আজ ভিক্টরের মুখে আদর করে স্বপনদা নামটা শুনে মিনু চলে আসে। পেছন থেকে ভিক্টর বলে – তোমাদের এত দেমাক ভাল নয়। তোমরা পস্তাবে।
ঠিক তাই হল। মহালয়ার তিন চারদিন পরে শম্ভু একটা বড় ভাড়া পেয়ে সবার জন্য কিছু না কিছু নতুন এনেছে। আর ঠিক তারই গন্ধ পেয়ে মাঝ রাতে এসে হাজির ভিক্টর। কাটা স্বপন ও তার দলবল সাথে করে। ছিটে বেড়াটা পুরো ভেঙে দেয়। শম্ভুকে মারধর করে। কোন টাকা পয়সা না পেয়ে মিনুর দিকে এগোয়।
মিনু জানত। আসলে এসবই বাহানা। শেষ পর্যন্ত মিনুর কাছে আসবেই। এমনটা হবে ক’দিন ধরে টেরও পেয়েছিল। তাই বিছানায় বালিশের পাশে রাখা ছিল। কেন না অস্ত্র ছাড়া অসুর নিধন সম্ভব নয় বলেছিল পাড়ার অনিতা বৌদি।
কাটা স্বপনের সামনে পুরুষকার দেখাতে ভিক্টর এগিয়ে যেতেই মিনু চালিয়ে দেয়। ভিক্টর কাটা কলা গাছের মত পড়ে যায়।
পরদিন হাতকড়া পরা মিনুকে দেখে অনিতা বৌদি বলে – এ যুগে সবাই মাটির দুর্গাকে পূজো করে। সত্যিকারের দুর্গার এটাই ভবিতব্য।
মিনু মুচকি হাসে।

Dipankar Bera