” কী হে নবীন, মার্কেট থেকে তো একদম উধাও হয়ে গেলে! সন্ধ্যাবেলার আড্ডায় আসছ না, সকালে বাজারেও দেখিনা, একদম ডুমুরের ফুল হলে গেলে তো !” অনেক দিন পর নবীনকে সকালবেলা বাজারে দেখে বলে উঠল পরেশ।
জিভ কাটল নবীন। ” আরে না না, কী যে বল। ডুমুরের ফুল টুল কিছু না। সিনিয়র সিটিজেন হয়ে গেছি তো , তাই ছেলেদের কথা শুনে চলতে হচ্ছে। তবে ওরা তো আমাদের ভালর জন্যই বলছে। তারপর তোমার বৌদি বাতে খুব কষ্ট পাচ্ছে ।
ওকেও দেখতে হচ্ছে। বড় ছেলেটা আমেরিকায় আছে এখান। সন্ধেবেলায় রোজ ফোন করে । আমি না ধরলে কষ্ট পায়। ছোটটা চেন্নাইতে। ও আবার সকালে ফোন করে। ওরটাও ধরতে হয়। করোনার জন্য বেশি বাইরে যেতে নিষেধ করেছে, এই আরকি।” নবীন উত্তর দিল।
” সে তো আমিও সিনিয়র সিটিজেন । কিন্তু বাজারে রোজই আসতে হয়। আমার ছেলেটা একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে আছে। করোনার জন্য খুব চাপে আছে। প্রতিদিন নাকেমুখে গুঁজে অফিস ছুটছে। আমার গিন্নি তো কোনকালেই বাজারে আসেনা। তাই মাস্ক পড়ে, স্যানিটাইজারের শিশি পকেটে নিয়ে আমাকেই আসতে হয়। সবাই তো আর তোমার মত ভাগ্যবান হয় না ।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে পরেশ বলল।
” না না , এভাবে বোলো না। আমার ছোটটা অনলাইনে বাজার বুক করে দেয়। তাই কম আসি ।” নবীন পরিস্থিতি সামলাতে বলল।
” তুমি যাই বল, তোমার ছেলেরা তোমাকে আর বৌদিকে যা সুখ দিচ্ছে আমারটা কোনোদিনই দিতে পারবে না।” হতাশা মেশানো গলায় বলল পরেশ।
পরেশের কাঁধে হাত রেখে নবীন বলল ,” জানতো পরেশ, সুখ জিনিসটা ভীষণ আপেক্ষিক।
রোজ ডিনার টেবিলে আমরা দুই বুড়োবুড়ি ঘড়ির কাঁটার শব্দ শুনে খাওয়া সারি। এখন আর টিভি দেখতেও ভালো লাগে না। কিন্তু তুমি আর বৌদি শত অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও ছেলে- বৌমাকে নিয়ে ডিনার করার যে সুখ পাও, তা আমরা বোধহয় এ জীবনে আর পাব না !”